লেখকঃ মোঃ রবিউল ইসলাম
১০ম অধ্যায় হযরত রাবেয়া বসরী(রহঃ)- এর প্রার্থনা
শাইখা বিনতে শুয়াল রাবেয়া সম্পর্কে বলেন :-
রাবেয়া সারারাত ধরে উপাসনা করতেন এবং যখন সূর্য উঠার আগ পযন্ত নামাজের স্থানে তিনি সামান্য নিদ্রা যেতেন যতক্ষণ না আকাশকে সোনার রঙে রাঙিয়ে যেতো। এবং যখন তিনি ওই নিদ্রা থেকে ভয় জেগে উঠতেন, তখন আমি তাকে বলতে শুনেছি হে আমার আত্মা তুমি আর কতকাল নিদ্রা যাবে। এবং কতবার জেগে উঠবে, শীঘ্রই তুমি এমন নিদ্রায় অভিভূত হয়ে পড়বে যার থেকে আর তুমি জাগতে পারবে না,যতদিন না পুনরুত্থান দীনের ধ্বনি বেজে ওঠে।
একটি গল্পে রয়েছে যে রাবেয়া একবার তাপসীনি হাইমুনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। যিনি ছিলেন কৃচ্ছাসাধনা অত্যন্ত কঠোর।এবং প্রার্থনা করতেন এই বলে: হে আল্লাহ আমার ইচ্ছা যেদিন রাত হয়ে যাক যাতে আমি তোমার সান্নিধ্য মুগ্ধ করতে পারি। মধ্যরাত্রিতে রাবেয়ার ঘুম এসে যায় এবং হাইমুনা উঠে পড়ে,এবং রাবেয়ার কাছে গিয়ে তাকে লাথি মেরে বলেন ওট ওট সত্য পথচারীদের বর এসে গিয়েছেন। রাতের কোন ঈদের সাজগোজ তো রাতেই ঝকমকিয়ে ওঠে। এই উপাখ্যানটি খুবই উল্লেখযোগ্য কারণ এখানে প্রেমিক এবং প্রেমাস্পদ এর মধ্যে আধ্যাত্মিক পরিণয় এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
তার একজন জীবনীকার বলেন তিনি রাতদিন মিলিয়ে এক হাজার রাকাত নামাজ পড়তেন। এবং কেউ তাকে বলেছিল আপনি কি পেতে চান এর দ্বারা তিনি জবাব দিয়েছিলেন। আমি এর দ্বারা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করতে চাই না,আমি এটা এজন্যই করি যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল্লাহর রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম যাতে পুনরুত্থান দিনে অবশিষ্ট নবীদেরকে বলতে পারে আমার সম্প্রদায়ভুক্ত এই মহিলাকে দেখুন, এই হচ্ছে তার কাজ।
তার বন্ধু সুফিয়ান আল সাত্তারী বর্ননা করেছেন:-
আমি একবার রাবেয়ার কাছে গেলাম তখন তিনি নামাজ পড়তেছিলেন সেখানে তিনি সারারাত ধরে প্রার্থনা করেছিলেন এবং আমিও প্রার্থনা করতে লেগে গেলাম ভোর বেলা পর্যন্ত। আমি তাকে বললাম আমরা কিভাবে তাকে ধন্যবাদ জানাবো। তার করুনার জন্য যার ফলে আমরা সারারাত প্রার্থনা অতিবাহিত করতে পারলাম,তিনি বললেন আগামীকাল উপবাস করে। রাবেয়া অধিকাংশ সময় আল্লাহর ভজন -পূজন দীপ্ত প্রত্যয় আনন্দে ভরপুর হয়ে থাকতেন।
একজন প্রাচীন লেখক বলেন যে:
একবার বিচারের ভয় আকুল হয়ে তিনি প্রার্থনা করেছিলেন ওগো আল্লাহ তুমি কি সেই হৃদয় কে নরকে দেবে যে তোমাকে ভালবাসে, এবং এক অদৃশ্য কণ্ঠকে তার মর্ম গভীরে বলতে শুনলেন আমি তা কখনো করবোনা তুমি আমার সম্বন্ধে মন্দ ধারণা করো না।
তার প্রার্থনা গুলিতে আমরা দেখতে পাই তার প্রার্থনা ছিল প্রকৃতপক্ষে তার প্রভুর সঙ্গে প্রেম আলাপ। তার নিজের জন্য বা অন্য কারও স্বপক্ষে কোন কিছু কামনা নয় বরং তাছিল তার দিব্য শাখার সঙ্গে সুগভীর আলাপ এবং তার সান্নিধ্যে তৃপ্তিপুলক।
হযরত রাবেয়া বসরীর করা কিছু প্রার্থনা নিচে তুলে ধরা হলো:-
১, হে আমার প্রভু এ জগতে রণসজ্জা তুমি আমাকে দেবে তা তোমার শত্রুদেরকে দিয়ে দাও এবং পরজগতের অংশ যা তুমি আমাকে দেবে তা তোমার বন্ধুদেরকে দান করো। আমার জন্য তুমিই যথেষ্ট।
একদিন রাত্রে রাবেয়া প্রার্থনা করলেন ওগো আল্লাহ যখন আমি উপাসনা করি তখন আমার অন্তর থেকে শয়তানের সমস্ত কুমন্ত্রণা দূর করে দাও নতুবা দয়া করে এই কুমন্ত্রণা সময় তুমি আমার উপাসনা কে গ্রহণ করে নাও।
২, হে আমার প্রভু আমি যদি নরকের ভয় তোমার উপাসনা করি তাহলে আমাকে নরকেই জ্বালিয়ো এবং আমি যদি স্বর্গের আশায় তোমার উপাসনা করি তাহলে তুমি আমাকে সেখানে স্থান দিও না। কিন্তু আমি যদি তোমার জন্যই শুধু তোমার উপাসনা করি তাহলে তুমি তোমার শাশ্বত রূপ মাধুরী থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না।
৩, ওগো মহান আল্লাহ এই জগতে আমার কাজ এবং ইচ্ছা হল এ জগতের সমস্ত কিছুর কথা ভুলে গিয়ে একমাত্র তোমাকে স্মরণ করা। এবং পরজগতে সেখানকার সবার মধ্যে থেকে আমি তোমার সঙ্গে একাকি সাক্ষাৎ করতে চাই আমার বক্তব্য হবে তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।
৪, ওগো মোর আল্লাহ আমার অন্তরে তোমার সর্বশ্রেষ্ঠ দান হলো অর্থাৎ তোমাকে পাওয়ার আশা এবং আমার জিব্বা নিষ্ঠুরতম শব্দ হলো তোমার স্তুতি। ওগো আল্লাহ এ জগতে আমি তোমার স্মরণ ছাড়া থাকতে পারি না তাহলে পরজগতে কি করে আমি তোমার দর্শন ছাড়া থাকতে পারব। হে আমার প্রভু আমার ফরিয়াদ হল এই যে আমি তোমার রাজ্যে একজন অচেনা পরদেশি এবং তোমার গুণকীর্তন কারীদের মধ্যে বড় একাকী।
0 মন্তব্যসমূহ