আল-কুরআনের আলো

Md: Robiul islam আমি মোঃ রবিউল ইসলাম আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে স্বাগতম, আমি নিয়মিত পোষ্ট করে থাকি, আর নিয়মিত পোষ্ট-এর আপডেট পেতে এখনই আল-কুরআনের আলো �� ওয়েব পেজটি সাবস্ক্রাইব করুন ধন্যবাদ।

৮ষ্টম অর্ধায় হযরত রাবেয়া বসরী (রহ:) এর সাধনা

লেখক: মো: রবিউল ইসলাম 

৮ষ্টম অর্ধায়  হযরত রাবেয়া বসরী (রহ:) এর সাধনা 


সুফি জীবনে অন্যতম চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের পথে আত্মবিশুদ্ধি- অর্জন হলো প্রথম সোপান, বরং যারা এই পথে দীক্ষা গ্রহণ করতেন তাদের সকলের জন্যই কৃচ্ছাসাধন ছিল বাধ্যতামূলক। একজন নবদীক্ষিত সাজাদ যখন তার পশু সত্বা ও প্রবৃত্তিগুলি  থেকে মুক্ত হতেন তখনই কেবল তিনি আশা করতে পারতেন ওই মার্গে প্রবেশ করার যা তাকে আল্লাহর সঙ্গে মিলনের লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। সর্বপেক্ষা প্রচলিত যে বিশেষণে সুফিদেরকে বিশেষিত করা হয় তা হলো কৃচ্ছাসাধক। এমনকি যারা ওলীত্ব লাভ করেছেন, তারাও দু-একজন বাদে তাদের জীবনের শেষ পর্যন্ত এইব্রত পালন করে গিয়েছেন। একজন সুফি লেখকের কথা এইভাবে ব্যক্ত করেছেন, যদি তুমি জিজ্ঞাসা করো পথের পথিক কে...? পথিক হচ্ছে সেই যে তার আদি সম্বন্ধে অবহিত। সে এমন পথিক যে দ্রুত বেগে এগিয়ে চলে। সে তার পশু সত্বা থেকে  এমন ভাবে পবিত্র হয়েছে যেমন ধোঁয়া থেকে অগ্নিশিখা।
রাবেয়া আল-আদাবিয়া  ছিলেন এমনই একজন কৃচ্ছসাধিকা যিনি তাঁর জীবনের শেষ পর্যন্ত ভোগ ও বাসনা বর্জনে অবিচল ছিলেন। বারবার তার বন্ধুরা তার দুঃখ দরিদ্র মোচনের জন্য তাদের মাল থেকে তাকে কিছু দিতে চেয়েছেন কিন্তু তিনি তাদের সেই প্রস্তাবিত দান গ্রহণ করেননি তিনি শুধু তার আরাদ্ধ প্রভুর উপরে নির্ভর করেছেন তার আবশ্যকীয় জিনিসের জন্য।

 আক্তারের বর্ণনা অনুসারে ক্রীতদাসিত্ব থেকে মুক্তিলাভের পর কিছুদিনের জন্য তিনি মরুভূমিতে চলে যান এবং সেখানে একটি গুহায় নির্জনবাস অবলম্বন করেন এবং এমনকি প্রত্যাবর্তনের পর তিনি সংসার থেকে দূরে নির্জনে অবস্থান করেন অবশ্য ও অন্যান্য দর্শনার্থীদের সমাগম এর পরিপ্রেক্ষিতে যতদূর সম্ভব ছিল ততটুকু নির্জনতাই অবলম্বন করেন। রাবেয়ার উপর আমাদের প্রাচীন গ্রন্থাগার আল জাহিজ বলেন যে রাবেয়া আল-কাইসিয়ার কয়েকজন বন্ধু তাকে বলেন আমরা যদি আপনার আত্মীয়-স্বজনদেরকে বলি  তাহলে তারা আপনাকে আপনার গৃহকর্মীর জন্য একজন ক্রীতদাসের ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু প্লিজ তিনি বলেছিলেন সত্য কথা এই যে জিনিস সমস্ত জগতের মালিক তার কাছ থেকে পার্থিব কোন কিছু চাইতে আমার লজ্জাবোধ হয়। অতএব যারা জগতের কোন কিছুই মালিক নয় তাদের কাছ থেকে কি করে আমি সেসব জিনিস চাইতে পারি...?
অনুরূপ একটি গল্প বর্ণিত হয়েছে এক ব্যক্তি কে কেন্দ্র করে. সে তার কাছে চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে  এসে বলেছিলেন, আপনার কোন প্রয়োজনে এগুলোকে ব্যয় করুন এই ঘটনায় তিনি কেঁদেছিলেন এবং মাথা তুলে বলেছিলেন আল্লাহ জানেন যে আমি তার কাছে জগতের কোন কিছু চাইতে লজ্জিত হই যদিও তিনি জগতের অধিকর্তা আর কি করে তা আমি অন্য লোকের কাছ থেকে নিতে পারি যে তার অধিকর্তা নয়।

আত্তার বর্ণনা করেছেন যে:-
 কিছু লোক তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল তখন তিনি একটি মাংস খন্ড তার দাঁত দিয়ে কাটছিলেন। তারা তাকে বলেছিল আপনার ঘরে কি কোন ছুটি নেই এটাকে কাটার জন্য, তিনি বলেছিলেন আল্লাহর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে আমি ঘরে কোনদিনও ছুরি রাখিনি। আর তাই আমার কোন ছুটি নাই।
নিশ্চিত ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে আল্লাহর আরাধনা করার উদ্দেশ্যে পার্থিব কামনা বিসর্জন দেওয়ার শিক্ষা কিভাবে লাভ করেছিলেন সে ব্যাপারে আত্তার একটি গল্প বলেছেন:-
একবার ক্রমাগত সাতদিন সাতরাত তিনি উপবাসের ছিলেন, এবং কিছু খাননি আর রাতেও তিনি ঘুমাননি, এভাবে প্রত্যেকটি উপাসনায় কাটিয়েছিলেন। তারপর প্রাণান্তকর অবস্থা তখন কেউ তার ঘরে প্রবেশ করল এবং তার কাছে এক বাটি খাবার নিয়ে এলো  রাবেয়া তা নিলেন এবং একটি প্রদীপ আনতে গেলেন। যখন তিনি ফিরে এলেন তখন একটি বিড়াল খাবার ভর্তি বাটিটি উল্টে ফেলেছিল। তিনি বললেন যাই একটা পানি পাত্র নিয়ে আসি এবং পানি দিয়েই আমি উপবাস ভঙ্গ করব, যখন তিনি পানিপাত্র নিয়ে এলেন তখন প্রদীপ নিভে গিয়েছিল। তিনি অন্ধকারে পানি পান করতে চাইলেন কিন্তু পাত্রটি হাত থেকে পড়ে গেল এবং ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। রাবেয়া আর্তনাদ করে উঠলেন এবং এমন একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন যে মনে হলো  তার প্রভাবে ঘরটিকে আগুন ধরে যাবে।
তিনি বললেন হে আমার প্রভু তুমি এই হতভাগিনীর সঙ্গে এ কেমন ব্যবহার করছ। তিনি শুনতে পেলেন কোন কন্ঠস্বর তাকে বলছে সাবধান তুমি যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমাকে জগতের সমস্ত আরাম আয়েস দান করব, কিন্তু আমি তোমার অন্তর থেকে আমার বিরহ ব্যথা কেড়ে নেব কারণ এই বিরহ ব্যথা ও জাগতিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ একটি অন্তরে স্থান পেতে পারে না। হে রাবেয়া তোমার একটি ইচ্ছা রয়েছে এবং আমারও একটি ইচ্ছা রয়েছে, আমি আমার ইচ্ছা কে তোমার ইচ্ছার সঙ্গে একটি হৃদয়ে একত্রিত হতে দিতে পারি না।
 তিনি বলেন যখন আমি এই সতর্কবাণীর শুনলাম তখন আমি জগতের সমস্ত কিছু থেকে আমার অন্তরকে বিচ্ছিন্ন করে নিলাম। এবং আমার পার্থিব বাসনা গুলি কর্তৃত করে দিলাম। যার ফলে 30  বছর ধরে আমার প্রত্যেকটি নামাজকে আমি আমার শেষ নামাজ বলে মনে করেছি। এবং আমি সমস্ত সৃষ্ট জীব থেকে নিজেকে পৃথক করে নিয়েছি। আর তাই যখন প্রভাত হয় পিছে থেকে কেউ আমাকে তার আল্লাহ থেকে দিমোনা  করে দেয়, এই আশঙ্কায় আমি প্রার্থনা করেছি হে প্রভু আমাকে আমার কাজে ব্যস্ত রাখুন যাতে আমাকে কেউ আপনার ধ্যান থেকে দিমোনা না করতে পারে। তার দৃষ্টিভঙ্গির কঠোরতার কথা আমরা এই ছোট গল্পে পাই। গল্পটিতে রয়েছে, যে কোন এক উৎসবের দিনে বাইরে গিয়েছিলেন এবং যখন তিনি ফিরে এসেছিলেন তখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল উৎসবটির ব্যাপারে আপনার অভিমত কি তিনি বলেছিলেন আমি দেখলাম আপনারা কিভাবে বেরিয়ে গেলেন সুন্নতকে প্রাণবন্ত করার জন্য।এবং অধর্মকে বিলোপ করার জন্য কিন্তু ভোগ বিলাসের প্রতি আপনাদের মোহ প্রকাশ হয়ে পড়লো। এবং তার ফলে মুসলিমদের মাথা আপনারা (হেট) নত করে দিলেন। রোগ এবং যাতনাভোগ কে রাবেয়া তার প্রতি তার প্রভুর ইচ্ছা বলে বরণ করে নিতেন।এবং অকাতরে সেগুলিকে ভোগ করে চলছেন এমনকি তিনি ব্যথা যাতনার কথায় বিস্মৃত হয়ে যেতেন। একাধিক কাহিনীতে আমরা দেখি যে যতক্ষণ না অন্য কেউ তাকে তার কোনো জখমের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন ততক্ষণ তার সে ব্যাপারে কোন খেয়াল থাকতো না। বর্ণিত আছে যে একবার একটি গাছের ডালে তার মাথায় আঘাত লাগে রক্ত ঝরতে থাকে কিন্তু,সে ব্যাপারে তার কোন হুঁশ ছিলোনা। এবং যখন কেউ তাকে বললেন আপনার কি যাতনা অনুভব হচ্ছে না। তখন তিনি বলেন আমার কাজ হলো তার ইচ্ছার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া। তোমরা যেসব জিনিস দেখছো সেগুলি থেকে অন্য কিছুতে তিনি আমাকে নিমগ্ন রেখেছেন।
এই মর্মে আরেকটি গল্প রয়েছে যাতে বলা হয়েছে যে একবার তিনি রাত্রিতে আল্লাহর কাছে তার মিনতি জানাচ্ছিলেন। গভীর আত্মনিমগ্ন তার ফলে তিনি নিভৃত হয়ে পড়েছিলেন।এবং তার চোখের একটি শিরা ছিঁড়ে যায় কিন্তু যখন তিনি জাগ্রত হয়েছিলেন তখন সে ব্যাপারে কিছু টের পায়নি।
আরেকটি হাদীসে পাওয়া যায় একবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন,এবং তার অসুস্থতা ছিল সাংঘাতিক। তার বন্ধুরা তাকে দেখতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন তার পীড়ার কারণ কি....? রাবেয়া বলেন আমি স্বর্গের দিকে দৃষ্টিপাত করেছিলাম এবং আমার প্রভু আমাকে শাসন করেছেন। আমার অন্তর স্বর্গের দিকে করেছিল (অর্থাৎ আমি তার  ভোগ-বিলাস কামনা করেছিলাম ) এবং আমার বন্ধু আমাকে তিরস্কার করেছেন এটা হলো তার ভৎসনা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ