আল-কুরআনের আলো

Md: Robiul islam আমি মোঃ রবিউল ইসলাম আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে স্বাগতম, আমি নিয়মিত পোষ্ট করে থাকি, আর নিয়মিত পোষ্ট-এর আপডেট পেতে এখনই আল-কুরআনের আলো �� ওয়েব পেজটি সাবস্ক্রাইব করুন ধন্যবাদ।

৩৮ তম অর্ধায় জিনের বাদশার কবল হইতে ভক্তকে উদ্ধার


লেখক: মো: রবিউল ইসলাম 
৩৮ তম অর্ধায় জিনের বাদশার কবল হইতে ভৃত্যকে উদ্ধার

ভারতের শ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহ জগৎখ্যাত দরবেশ হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ:) হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী এর দরবারে যাতায়াত করতেন তিনি লাতায়েকে রায়েব কিতাবে হযরত বড় পীর এর আশ্চর্য কারামত বর্ণনা করিয়াছেন। কারামতটি খুবই মূল্যবান। উহাতে আমাদের অনেক কিছু শিখিবার রহিয়াছে। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী(রহ:) - এর বর্ণনা জানা যায়, তিনি একবার বাগদাদে অবস্থানকালে কয়েকজন বন্ধু মিলে ভ্রমনে বাহির হইয়াছিলেন। তাদের সঙ্গে হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (র:) -এর একজন ভৃত্যও ছিল। তাহারা কিছু দূর পথ অতিক্রম করিয়া একটা সুন্দর বাগান দেখিতে পাইয়া, সেই বাগানের মধ্যে প্রবেশ করিলেন। বাগানটি ছিল অতি সুন্দর গাছে গাছে পাখিরা ডাকছিল। অসংখ্য ফুলফল শোভা পাইতেছিল শাখা- প্রশাখায়। তাহারা বাগানের এই অপরূপ সৌন্দর্য ঘুরিয়া ফিরিয়া দেখিতে লাগিলেন। কিছুক্ষণ এভাবে ঘুরাঘুরিতে কাটিয়ে গেল। অতঃপর সেখানে এক কাণ্ড ঘটে গেল, একটি কাল সর্প দুটো বাগানের একপ্রান্ত হইতে যাইতেছিল। সহসা হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:) - এর ভিত্যজন সর্পটি দেখিতে পাইয়া দ্রুত ছুটিয়া গেলেন, এবং স্বীয় লাঠির আঘাতে সর্পটির মস্তক ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলিলেন। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী(রহ:)  দেখলেন সর্পটি মৃত্যুবরণ করিয়াছে। এবং তাহার সাথী বন্ধুটি তাহাদের দিকে আসিতেছেন। ঠিক এই সময় সমস্ত বাগান কাঁপিয়া উঠিল মুহূর্তের মধ্যে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল, অন্ধকারে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হইলো না, এবং প্রচণ্ড ঝড় আসিল ঝড়ের প্রচন্ডতায় গাছপালা চুরমার হইয়া বিকট শব্দ হইল। তাহারা যে সেখানে ছিল সেখানে ভয়ে জড়োসড়ো হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ঝড় থামিয়া গেল। তাহারা হাফ ছাড়িয়া বাচিল। কিন্তু দুশ্চিন্তার কারণ হলো যে তাদের সাথে বন্ধুটি হযরত বড়পীর (র:) - এর খাদেমকে কোথাও পাওয়া গেল না। তাকে সমস্ত বাগানে খুঁজিতে লাগলেন কিছুক্ষণ তল্লাশির পর তাহারা ব্যর্থ মনোরথ হইলেন, আরো কিছুক্ষণ বাগানের আশেপাশে তালাশ করিয়া যখন একেবারে নিরাশ গৃহাভিমুখে ফিরিবার প্রস্তুতি লইতেছিলেন। তখন তাহারা দেখলেন যে উক্ত খাদেম বন্ধুটি সাহি পোশাক পরিয়া মস্তকে মূল্যবান মুকুট ধারণপূর্বক তাদের দিকে ছুটিয়া আসিতেছেন। হযরত মাইনুদ্দিন চিশতী(রহ )এবং তাহার সাথীরা এইরুপ দেখিয়া অবাক হইয়া গেলেন। ভৃত্য বন্ধুটি নিকটে আসিয়া হযরত মাইনুদ্দিন চিশতি(রহ:) কে জড়াইয়া ধরিয়া কান্নায় ভেঙে পড়লেন। ইহা দর্শনের সকলেই আরো অবাক হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন আপনি কাঁদতেছেন কেন...?
 এতক্ষণ কোথায় গিয়েছিলেন খুলিয়া বলুন। খাদিমটি কিছুটা প্রকিতিস্থ হইয়া বলিলেন। আপনারা তো দেখিআছেন আমি সর্পটি হত্যা করিয়া আপনাদের নিকট ফিরিয়া আসিতে ছিলাম তখন হঠাৎ চারিদিক অন্ধকার হইয়া গেল। আর আমি কিছুই  দেখিতে পাইলাম না।সেই অন্ধকারের মধ্যে কয়েকটি দত্ত আসিয়া আমার হস্তপদ বাঁধিয়া শূন্যে উঠাইয়া লইয়া গেল। নিমেষের মধ্যে আমাকে দত্তদেরন রাজ প্রসাদে নামানো হইল। আমি সেই প্রাসাদের মেঝেতে দেখিতে পাইলাম একটি সদ্য নিহত মৃতদেহ পড়িয়া আছে। আর মৃতদেহ পাশে খোলা তরবারি হাতে দৈত্যরাজ ভয়ানক ক্রোধান্বিত হইয়া পদচারণা করিতেছে। তাহার সেকি বিকট মূর্তি। আমাকে দেখিয়ে দত্তরাজ আরো ক্ষেপিয়া গেল। তাহার শরীর হইতে আগুনের ফুলকি ছুটিতে লাগিল। কিছুক্ষণ পর দত্তরাজ অশ্রু সংবরণ করিয়া আমাকে লক্ষ্য করিয়া হুঙ্কার ছাড়িলো।হে মনুষ্য তুমি কোন অপরাধে আমার পুত্রকে হত্যা করিয়াছো। তোমার কি ক্ষতি করিঢ়াছিল।হত্যা করে তুমি কি পাইলে। আমার পুত্রকে হত্যা করিতে তোমার একটু কষ্ট হইল না...?
 আমি দৈত্যরাজের ভয়ঙ্কর গর্জনে ভীত হইয়া পড়িলাম। কিন্তু তাহার প্রশ্নের জবাবে বললাম দৈত্যরাজ আমি ইহাকে হত্যা করি নাই হত্যার মতো নিষ্ঠুর কাজ আমি করতে যাব কেন...? আমার জবাব শুনে আসি আরো ক্ষেপিয়া গেল। বলিল তুই নরাধম মিথ্যা বলিস কেন। তোর হাতের লাঠি দ্বারা আঘাত করিয়া আমার পুত্রের মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়াছিস ওই দেখ তোর লাঠি মৃত্রের পাশে পড়িয়া রহিয়াছে। ভাবি আছিস মিথ্যা বলিয়া তুই নিস্তার পায়বি তাহা হইবে না। আমি এই তরবারির আঘাতে তোর গর্দান কাটিয়া পূত্রহত্যার শাস্তি বিধান করিব। আমি নির্ভয় বললাম,দৈত্যরাজ আমি মিথ্যা বলি নাই আমি তো কখনো কোন মানব কিংবা দানবকে হত্যা করি নাই। তবে কিছুক্ষণ পূর্বে বাগদাদের বাগানে আমি একটি কালো বিষধর সর্পহত্যা করিয়াছি। আমার কথা শুনিয়া দোস্তরা বিকট চিৎকার করিয়া বলিল অকারণে কোন আইনের শর্ত হত্যা করলে আমি তৎক্ষণাৎ উক্তুতুল মর্জি কাবলাল ইতা হাদীসখানি তাহাকে শুনাইয়া দিলাম। মহানবী (সা:) বলিয়াছেন কোন কষ্টদায়ক হিংস্য প্রনি কারো কষ্টের কারণ হইবার পূর্বে তাকে নিধন কর। আমি আপনার পূত্র হত্যা করি নাই ইসলামের বিধি বলে স্বর্প হত্যা করিয়াছি। আমি কোন অন্যায় করি নাই। দোস্তরা ভয়ানক রাগতস্বরে বলিল- তুই খুনী এবং হিংস্র জীব। কাল সর্পের রূপ ধারণ করিয়া আমার পুত্র বাগানের ভিতর আত্মগোপন করিতেছিল। তুই তখন ঐ তাহাকে হত্যা করিয়াছিস আবার বলিতেছিস কোন অন্যায় করোস নাই। আমি তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মেরে ইহার প্রতিশোধ লইব। দৈত্যরাজ বিচারক ডাকিল। এবং কেউ একজন আশিয়া মৃতদেহ পরীক্ষা করল এবং আমাকে অপরাধী সাব্যস্ত করল। আমাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হইল।  আমি এইরকম শুনিয়া ভয়ে কাঁপিতে লাগিলাম জল্লাদ আসিয়া আমাকে ভূমিতে নিয়ে গেল। প্রাসাদের নিকট একটি খোলা স্থানে আমাকে দাঁড় করানো হইল। আমি ভয়ানক ভীত হইয়া পড়িলাম মৃত্যুর ভয় আমার জ্ঞান লুপ্ত হইবার উপক্রম হইল। আল্লাহকে স্মরণ করিতে লাগিলাম। মৃত্যু যখন নিকটবর্তী হইয়া ছিল তখন হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)- এর নাম স্মরণ করিয়া বলিলাম হুজুর আমাকে চিরদিনের মতো বিদায় দিন। দোস্তরাজ এবং তাহার বিচারক আমাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেছে। ইহজগতে আমার আর আপনার খিদমত করা ভাগ্যে জুটলো না।
আমার মনে আছে কি শেষ হতেই দেখলাম একজন অশ্বারোহী ছুটিয়া আসিলেন। তাহার হস্তে খোলা তরবারি ঝলসাইয়া উঠিল। মুহুর্তের মধ্যে সেই যুবক বীরপুরুষ আমার কাছে আসিয়া জল্লাদের গর্দান কাটিয়া ফেলিল। অম্নি বীর সৈনিক অদৃশ্য হইয়া গেলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে টের পাইলাম দত্ত রাজপ্রাসাদে শোরগোল পড়িয়া গেল সমস্ত দুনিয়া কাঁপিয়া উঠিল।দৈত্যরাজ সিংহাসন হইতে গড়াইয়া জমিনে পড়িয়া গেল। মুহুর্তের মধ্যে দত্ত আমার পায়ের কাছে আশিয়া বসিয়া বল্লেন। আপনি কে আমার নিকট খুলিয়া বলুন। আমি দত্ত রাজের অসহায় অবস্থা অবলোকন করিয়া বলিলাম। আমি হযরত বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)- এর খাদেম। দৈত্যটি বলিল আমাকে মাফ করুন আপনি বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (র:) -এর খাদেম তাহা জানিতে পারিলে এরূপ ব্যবহার কখনো করিতাম না। আমাকে মাফ করিয়া দিন। আমি তাকে প্রশ্ন করিলাম হে দৈত্যরাজ তুমি মানব সন্তান হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)- এর নাম শুনিয়া ভীত হইয়া পড়িলে কেন। দৈত্যরাজ বলির হুজুর-
 হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:) যখন আল্লাহপাকের উপাসনায় নিমগ্ন হন তখন সারা দুনিয়া দেওয়ান,পশুপাখি, তাহার নূরে আলোকিত হইয়া ওঠে যখন তিনি আল্লাহর আরশ এর দিকে তাকান তখন আকাশ-পাতাল কাপিতে থাকে। অতঃপর দৈত্যরাজ আমাকে তার প্রাসাদে নিয়ে গেল। সুস্বাদু খাবার আমি আর আমার সম্মুখে হাজির করিল আমাকে পোশাক-পরিচ্ছদে সাজাইয়া মাথায় মুকুট পরা দিল। এইতো এখন তাহার বিশেষ বাহিনী দিয়ে আমাকে বাগানের প্রান্তে হাজির করাইয়া দিয়া গেল। মহান আল্লাহর শুকরিয়া হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:) - এর উসিলায় আমি দৈত্যরাজের হাত হইতে নিষ্কৃতি পাইলাম।

পরবর্তী অধ্যায় জৈনক বৃদ্ধা মহিলার মৃত -পুত্র সন্তান জীবিতকরণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ