আল-কুরআনের আলো

Md: Robiul islam আমি মোঃ রবিউল ইসলাম আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে স্বাগতম, আমি নিয়মিত পোষ্ট করে থাকি, আর নিয়মিত পোষ্ট-এর আপডেট পেতে এখনই আল-কুরআনের আলো �� ওয়েব পেজটি সাবস্ক্রাইব করুন ধন্যবাদ।

৩৩ তম অধ্যায় একটি বালকের দরবেশী লাভ

       লেখক:মো: রবিউল ইসলাম 

                      ৩৩ তম অধ্যায়
   একটি বালকের দরবেশী লাভ

শেআব্দুল হোসেন বিন আহমদ এর লিখিত কিতাব গোলাসাতুল মুফাখখারীন হইতে জানা যাইতেছে যে হযরত বড়পীর (র:) এর বদৌলতে একটি বালক দরবেশি লাভ করিয়াছিলেন। ঘটনাটি নিন্মরুপ:-

শেখ আব্দুর রহমান বাগদাদি  নামে একজন পরহেজগার আল্লাহ ওয়ালা লোক মৃত্যু শয্যায় তার ছেলেকে উপদেশ দিলেন আমার মৃত্যুর সময় ঘনাইয়া আসিয়াছে। অতঃএব মৃত্যুর পর তুমি আমার উপদেশ মত হযরত বড়পীর (র:)- এর নিকটে যাইবে এবং তাহার নিকট হইতে দুনিয়া ও আখেরাতে নাজাত লাভের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করবে, হুজুরের উপদেশ বলি মানিয়া চলিব মনে রাখিও তাহার সংস্পর্শে থাকতে পারলে তোমার আর কোনো চিন্তা-ভাবনা থাকিবে না। তুমি আল্লাহর কৃপায় সুন্দরভাবে, জীবন-যাপন করিয়া যাইতে পারিবে কিছুদিনের মধ্যে শেখ আব্দুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। 
তার মৃত্যুর পর মৃত পিতার উপদেশ মোতাবেক হযরত বড় পীরের দরবারে আসিয়া আশ্রয় গ্রহণ করিল। ইয়াতীম ছেলের প্রতি বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী এর অন্তরে দয়া উদ্যত হইল তিনি ছেলেটির জন্য উত্তম জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। একদিন বালকটি উত্তম জামা কাপড় পরিধান করিয়া মাদ্রাসায় গেল মাদ্রাসার পড়াশোনা করিবার সময় সেখানে একজন ফকির আসিয়া তাহাকে বলিল হে আব্দুর রহমানের পুত্র তুমি তো মূল্যবান জামা কাপড় পরিধান করিয়াছো। তোমার পিতা এরুপ  আশা করেন নাই। তিনি তো তোমাকে বড় পীর এর কাছে থাকিয়া দরবেশী শিক্ষা গ্রহণ করিতে উপদেশ দিয়েছিলেন তুমি সেই রূপ না করিয়া দেখিতেছি আরাম-আয়েশ এবং বাদশা হালে দামি জামা কাপড় পরিধান করিতেছ। তোমার জন্য এই রূপ মূল্যবান জামাকাপড় শোভা পায় না। আমি তোমাকে স্মরণ করাইয়া দিতেছি দুনিয়ার আরাম-আয়েশে থাকিয়া কোন সাধনা হয় না। আমিরদের মত জামা-কাপড় পরিধান করিয়া আরামে থাকিয়া মূল্যবান খানাপিনা পান করিয়া কখনো খোদার নৈকট্য লাভ করা যায় না। তোমার পিতার ইচ্ছা ছিল, তুমি বড় পীর এর সান্নিধ্যে থাকিয়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের শিক্ষা গ্রহণ করবে। এইভাবে চল্লে অল্পদিনের মধ্যেই তুমি দুনিয়ার মোহে সবকিছু ভুলে যাবে। এই বলিয়া উক্ত ফকির অদৃশ্য হইয়া গেল। বালকটি  এরূপ কথাবাত্রা এবং অদৃশ্য হওয়ায় অবাক হইয়া গেল। তাহার অন্তরে ভয় এবং চিন্তার উদ্বেগ হইল। পিতার উপদেশ সে ভুলিয়া যাইতেছে ইহা কেমন কথা তাহা কেন হইবে। এই ভাবিতে ভাবিতে বালকটি অন্যরকম হয়ে গেল গায়ের দামি জামা কাপড় খুলিয়া ফেলিয়া প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় মাদ্রাসা হইতে বাহির হইয়া গেল। দেখিতে না দেখিতে সে গভীর জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেল। হঠাৎ বালকটির এরূপ কান্ড দেখিয়া উপস্থিত ছাত্ররা অবাক হইয়া গেল। তারা কিছুই বুঝিতে পারিল না অতঃপর দলে দলে লোকজন এবং ছাত্ররা লোকটিকে খুঁজিয়া বাহির করিবার জন্য জঙ্গলে অনুসন্ধান চালাইল। কিন্তু তাহাকে আর পাওয়া গেল না অবশেষে ছাত্ররা এবং অন্যান্য লোকজন হযরত বড়পীর (র:)- এর নিকট আসিয়া সেই বালকটির অন্তর্ধান হইবার ঘটনা খুলে বললো।
হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)- এর নিকট বিষয়টি গোপন ছিল না। তিনি তো আগেই বালকের বিষয়টি আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বলে জানিয়াছিলেন। আগন্তুকদের সব কথা নিরবে শ্রবণ করিয়া তিনি বলিলেন তোমরা বালকটির জন্য ব্যস্ত হইয়োনা। চিন্তার কোন কারন নাই উহার কোন অকল্যাণ হইবেনা। বালকটি মহান আল্লাহপাকের প্রেমে পাগলপারা হইয়া গিয়াছে সে জঙ্গলের মধ্যে আল্লাহর ধ্যানে নিয়োজিত হইয়াছে। আজ হইতে ২৮ দিনের মধ্যে সে আবার ফিরে আসবে তোমরা ওই দিন গভীর জঙ্গলের নিকটে আগাইয়া নদীর তীরে উপস্থিত থাকলে তাহাকে দেখিতে পাইবে। নদীতে গোসল ও অযু করিয়া উঠিয়া আসিবে। তোমরা এই কয়দিন অপেক্ষা করিতে থাকো তবে সে তোমাদের সঙ্গেই শহরের চলে আসবে। তোমরা এ কয়দিন অপেক্ষা করতে থাকো ব্রিথা চিন্তা করিও না। আগন্তুক ছাত্ররা এবং স্থানীয় লোকজনেরা হযরত বড়পীর(র:)- এর জবানি রূপকথা শ্রবণ করিয়া নিশ্চিত মনে সকলে নিজ নিজ কাজে চলিয়া গেল। তারা স্থির করিল ২৮ দিন পর উক্ত স্থানে যাইবে এবং বালকটিকে নিয়ে আসবে। একে একে দিন চলে গেল অবশেষে 27 দিন পার হইল। পরেরদিন কয়েকজন ছাত্র এবং লোকজনসহ বড়পীর (র:) -এর নির্দেশিত স্থানে আশিয়া জমায়েত হইল, তাহারা গভীর জঙ্গলের মধ্যে লক্ষ্য করিয়া দেখিতে পাইল যে একটি জীর্ণ - শীর্ণ শান্ত বালক একাত্রে বসিয়া আল্লাহ তাআলার জিকিরে মত্ত রহিয়াছে।জিকিরের শব্দে বোনের হিংস্র প্রাণীরা আসিয়া চতুর্দিকে বসিয়া আল্লাহর জিকিরে মাতোয়ারা। তাহারা বালকের চারিদিকে মহা আনন্দের ঘুরিয়া বেড়াইতেছে বোনের বৃক্ষরাজি থর থর করিয়া কাঁপিতেছে। কিছুক্ষণ পর তাহারা দেখিল বালকটি ইল্লাল্লাহ বলিতে বলিতে জিকির করিয়া নদীর দিকে ছুটিয়া চলিয়াছে। এবং আল্লাহ প্রেমে বিভোর হইয়া পড়িয়াছিল সে, তার পার্থিব দুনিয়ার কোন খেয়াল ছিল না। এবং সম্মুখে নদীর উপর দিয়া সে নিমেষে পার হইয়া গেল। নদীর অপর পারে তাহার জন্য লোকজন অপেক্ষা করিতেছিল।অতঃপর বালকটি লোকজনের সম্মুখে আসিয়া পড়িল তখন সে লোকজনকে দেখিতে পাইল। তখন ঐ জিকির বন্ধ করিয়া বলিল আমি বুঝিয়াছি তোমরা আমাকে লইয়া যাইতে আশিয়াছ। হযরত বড়পীর (র:) তোমাদের আমাকে নিয়ে যাবার জন্য পাঠাইছে ঠিক আছে আমি তোমাদের সঙ্গে তাঁর দরবারে যাইবো। অতঃপর বালকটিকে লইয়া লোকজনেরা হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)- এর দরবারে হাজির হইলো হযরত বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)  সযত্নে নিজের পাশে বসাইয়া তাহার শরীর হইতে পোশাক খুলে নিলেন। তিনি বালকটিকে পীরের পোশাক পরাইয়া ইলমে তাসাউফের পূর্ণজ্ঞান দান করলেন। অতঃপর বালকটি বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী এর নিকট দোয়া লইয়া তাহার নির্দেশ মোতাবেক নিজ বাড়িতে চলে আসেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বড় পীর এর পবিত্র সংস্পর্শে আশিয়া বালকটি  একজন পূর্ণ অলি আল্লাহ হইয়া গেলেন।

                   পরবর্তী অধ্যায় 
বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জীলানি(র:) একই সময়ে ৭০ বাড়িতে ইফতার করলেন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ