আল-কুরআনের আলো

Md: Robiul islam আমি মোঃ রবিউল ইসলাম আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে স্বাগতম, আমি নিয়মিত পোষ্ট করে থাকি, আর নিয়মিত পোষ্ট-এর আপডেট পেতে এখনই আল-কুরআনের আলো �� ওয়েব পেজটি সাবস্ক্রাইব করুন ধন্যবাদ।

৩২ তম অর্ধায় কামালিয়াত এর পূর্ণতা

                   লেখক:মো: রবিউল ইসলাম          
                 ৩২ তম অর্ধায়
            কামালিয়াত এর পূর্ণতা

ঈমাম আফি এর বর্ণনা হইতে যানা যাইতেছে যে:-
 হযরত বড় পীর (র:)  অশেষ কারামতের অধিকারী ছিলেন। তিনি আমাদের পূর্ণতা লাভের জন্য যে কঠোর সাধনা করিতে হয় তাড়াশে বুঝার জন্য একদা রান্না করা মুরগির ভোগ করিবার পর ওহার হাড়গোড় হইতে জীবন্ত মুরগি বাহির করিয়া ছিলেন।

মূলত কারামত কখনো নিজের ক্ষমতাকে প্রকাশ করিবার জন্য নহে উহা হইলো বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ শিক্ষা প্রদানের জন্য সংগঠিত হইয়া থাকে। আল্লাহর কুদরতের তার প্রিয় বান্দাদের মাধ্যমে যখন প্রদর্শিত হইয়া পড়ে তখন রহস্যজনক ঘটনা উক্ত বান্দার কারামত বলিয়া স্বীকৃতি লাভ করে। হযরত বড়পীর (র:) যুগোপযোগী অলৌকিক ঘটনাবলী মানবজাতিকে সত্য পথের আলোক বাতিকা রূপে কাজ করিয়া ছিল, আজও সেগুলি আমাদের আল্লাহ পাকের অসীম কুদরত উপলব্ধি করতে সাহায্য করিতেছে। এখানে রান্না করা এবং ভক্ষিত মুরগির হাড়গোড় হইতে জীবন্ত মুরগির কারামতটি বর্ণনা করিতেছি।

সেকালে বাগদাদের এক বৃদ্ধা রমনী হযরত বড় পীর এর ভক্ত ছিলেন তিনি একদা বড় পীরের দরবারে আসিয়া তাহার ছেলেটিকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করিবার মনোবাসনা ব্যক্ত করিলেন। পীর সাহেব অনুমতি দান করিলে ছেলেটিকে  তাহার খিদমতে রাখিবেন সদা সর্বদা তা নিয়া ফরমায়েশ কোরিয়া অবসর সময় জ্ঞান চর্চা করিয়া উত্তম মানুষ হইতে পারে। বড়পীর বৃদ্ধা রমণীর আর্জি মঞ্জুর করিবেন। অতঃপর একদিন বৃদ্ধ রমনী তাহার ছেলেটিকে হুজুরের দরবারে নিয়ে আসলেন এবং তাহার খিদমতে রাখিয়া গেলেন বড় পীর (র:) বৃদ্ধা রমণীর মনোবাসনা অনুযায়ী ছেলেটিকে জাহেরী বাতেনী ইসলামের বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। সত্যিকারের রূপে একজন সাধু ব্যক্তিতে পরিণত করিবার জন্য জাগতিক দুঃখ-কষ্ট সহিংসতা একাগ্রচিত্তে উপাসনা নিমগ্ন থাকা এবং বিপদে ধৈর্যধারণ রাত্রি জাগরণের অভ্যাস ইত্যাদিকে পাকাপোক্ত করিবার জন্য বিভিন্ন পন্থায় শিক্ষ শিক্ষা কার্য চলতে থাকিল।

এক কথায় শড়রিপুকে নিজের আয়ত্তে আনার জন্য যেমন কঠোর সাধনার প্রয়োজন সেইসব সাধনায় ছেলেটিকে নিয়েোযিত করিলেন। এজন্য প্রাথমিক অবস্থায় হযরত বড় পীর (র:) ছেলেটির খাবার বরাদ্দ করিলেন শুষ্ক রুটি ও ছোলা বুট।

ছেলেটি সাধনা আগাইয়া চলিল.সে বড় পীর এর নির্দেশনাবলী মানিয়া লইয়া প্রতিদিনের বরাদ্দ খাবার খাইয়া কাজকর্ম ও এবাদত-বন্দেগী করিতে লাগিলেন।
একদা তাহার বৃদ্ধ মা তার ছেলেকে দেখিবার জন্য হযরত বড় পীরের নিকট হাজির হলেন, মাতা আসিয়াছেন দেখিয়া ছেলেটি মায়ের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল তখন তাহার শরীর জীর্ণ-শীর্ণ হইয়া গিয়াছে। সল্প খাদ্য খানা এবং কঠোর বিধি-বিধান পালনের ফলে স্বাস্থ্য ভাঙিয়া পড়িয়াছে। পুত্রের এরূপ স্বাস্থ্যহানি দেখিতে পাইয়া বুকের মধ্যে ঘা পরিল। তাহার মর্মযাতনা শুরু হইল মাতৃস্নেহে টান পড়ে গেল, তিনি অতিশয় দুঃখিত হইলেন। ছেলের কাছে তাহার খাবার-দাবার সম্পর্কে জানিতে পারিয়া বুঝলেন খাবারের কাছে তাহার প্রাপ্ত হইয়াছে। ছেলেকে আর কি বলিবেন দুঃখ ও অভিমানে তিনি তখনি বড়পীর (র:)-এর খাস কামরায় গিয়ে হাজির হলেন। তখন বড়পীর (র:)-আহার করিতেছিলেন তাহাদের খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ছিল মুরগির গোশত এবং অনেকগুলো রুটি হযরত বড় পীর কে এরূপ দামী এবং সুস্বাদু খাবার খাইতে দেখিয়া, বৃদ্ধা রমণীর আরো ক্রোধ বাড়িয়া গেল। তিনি নিজেকে সামলাতে না পারিয়া বলিলেন হুজুর আপনি মুরগির গোশত সহ নানা রকম খাদ্য ভক্ষণ করিতেছেন। আর আমার আদরের পূত্রকে আপনার দরবারে আপনার খিদমতে থাকিয়া শুকনা হইয়াছেন, আমি এরূপ আশা করি নাই। হযরত বড়পীর (র:)  মহিলার অভিযোগের কারণ  বুঝিয়া ধীর শান্ত গলায়  বলিলেন। 
তোমার ছেলের স্বাস্থ্য ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে ইহা সত্য কথা। ছেলের এরূপ অবস্থা দেখিয়া মাতার মনোকষ্ট উপস্থিত হওয়াও স্বাভাবিক। তবে তুমি মনে রাখিও সাধনার সময় রিপুকে দমন না করিয়া কখনো সাধনার পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব নয়। গুরুবাক্য পালন করিয়া এই সমাজে ষড়রিপুকে দমন করতে পারে, দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে পারে, সহিংসতা অবলম্বন করতে পারে, সেই সব কিছুরই অধিকারী হইতে পারিবে। কু-প্রবৃত্তির মোহ হতে নিজেকে দূরে সরাতে না পারলে কখনো আল্লাহর নৈকট্য লাভ হইবে না। আরাম বিছানা স্ময়ণ করিয়া সাধনা হয় না। আল্লাহ কেউ লাভ হয় না, আমাদের বিশ্বনবী তো আরামের দিন যাপন করিতে পারিতেন। কিন্তু তিনি তো তাহা করেন নাই মহান আল্লাহর প্রিয় হাবিব আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ(সা:)  কোমল বিছানাতে তাহা না করিয়া। খেজুর পাতার বিছানা রুপায়ন করিতেন। পেটে পাথর বেঁধে রাখতেন। কেন তিনি এইভাবে জীবন যাপন করতেন নিশ্চয়ই আল্লাহর নৈকট্যের জন্য। তা না হলে তিনি এরূপ করিতেন না।
 হযরত আলী কিভাবে দিন কাটাইছেন তিনি ছিলেন মহানবী এর জামাতা শ্রেষ্ঠ বীর সেনানী, আল্লাহর প্রেমের সাগরে মজিবার জন্য কঠোর সাধনা করিয়াছেন। খলিফা হয়েও মোটা কাপড় পরিধান করিয়াছেন। শুকরিয়া মহান আল্লাহর নামে রাখিয়াছেন, কোন সাধনায় সুখের জন্য না। শরোরিপুকে দমন করিতে হইলে দরকার কঠোর সাধনা আর তাহা আমাদের নবী রাসূলগণ ইমাম খলিফাগণ করিয়াছেন। তা না হইলে তাহারাও আরাম-আয়েশে মহাসুখে দিন কাটাতে পারিতেন।
হযরত বড় পীর এর এইরূপ কথাবার্তা শ্রবণ করিয়া রমণীর ভুল ধারণা ভাঙ্গিয়া গেল। তিনি লজ্জা পাইলেন নিজের অন্যায় ও অসঙ্গত আচরণের জন্য অনুশোচনা করিয়া বলিলেন হুজুর আমিতো অবলা নারী জ্ঞান-গরিমা অন্ধ। আমি তো এসব কিছুই জানিনা না জানি আমি আপনার নিকট গুরুতর অপরাধ করি আছি আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। বৃদ্ধা রমনীর কাতর আবেদন শ্রবণ করিয়া তাহাকে ভালো রূপে সবকিছু বুঝাইয়া দেওয়ার জন্য হযরত বড় পীর পুনরায় বলিলেন। তুমি হয়তোবা জানিয়া থাকিবে বাদশা ইব্রাহিম আদহাম রাজসিংহাসন ত্যাগ করে আল্লাহর সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করিয়াছিলেন। সিও মৃত পুত্রকে সরাইয়া আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন হইয়াছিলেন। তাহার ধৈর্য গুন কেমন ছিল যাহা সাধকদের গ্রহণ করা প্রয়োজন। ধৈর্য সহ্য ছাড়া কোন সাধনা পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। বড়পীর(র:)  কিছুক্ষণ থামিয়া বৃদ্ধা মহিলাকে লক্ষ্য করিয়া আবার বলিলেন, এমনি তুমি হয়তো ভাবছো আমি কেন উত্তম খানা ভক্ষণ করি, আরামের বিছানা সয়ণ করি। তুমিতো ইহার রহস্য কিছুই জানোনা। 
হযরত বড় পীর এপর্যন্ত বলিয়া থামিয়া গেলেন এবং তাহার ভক্ষিত মুরগির চাবানো হাড়গোড় গুলি একখানে জমা করিলেন অতঃপর সেই হাড়গোড় গুলি নিজের হাতে তুলিয়া বলিলেন।
কম বিইজনিল্লাহ
 আল্লাহর হুকুমে জীবিত হইয়া যাও এবার সঙ্গে সঙ্গে হাড়- গোড় হইতে নিমেষের মধ্যে একটি জীবন্ত মুরগি বাহির হইয়া, ডাকতে ডাকতে জমিনে নামিয়া গেল। হযরত বড়পীর(র:)  লক্ষ্য করিয়া বলিলেন নিশ্চয়ই তুমি সবকিছু অনুধাবন করতে পারিয়াছো। তোমার পুত্র যখন এর উপযুক্ত হইবে তখন সে যেমন ইচ্ছে তেমন আহার করিতে পারিবে। বৃদ্ধা রমনী হযরত বড়পীর (র:)- এর আশ্চর্য কারামত দেখিয়া বিস্মিত হইয়া গেলেন এবং মাথা নীচু করিয়া পীর সাহেব কে সালাম জানাই নিজ বাড়িতে চলে আসলেন।

                     পরবর্তী অধ্যায়
একটি বালকের দরবেশি লাভ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ