আল-কুরআনের আলো

Md: Robiul islam আমি মোঃ রবিউল ইসলাম আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে স্বাগতম, আমি নিয়মিত পোষ্ট করে থাকি, আর নিয়মিত পোষ্ট-এর আপডেট পেতে এখনই আল-কুরআনের আলো �� ওয়েব পেজটি সাবস্ক্রাইব করুন ধন্যবাদ।

৩৯ তম অর্ধায় বৃদ্ধা মহিলার মৃত -পূত্র সন্তান জিবিত করলেন বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জীলানি (র:)

লেখক:মো: রবিউল ইসলাম 

৩৯ তম অর্ধায়
বৃদ্ধা মহিলার মৃত -পূত্র সন্তান জিবিত করলেন বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জীলানি (র:)  

হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)- আল্লাহর দরবারে হাত তুলে যাহা মুনাজাত করিতেন তাহাই তিনি লাভ করিতেন। তাহার কোনো মোনাজাত আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বরখাস্ত করিতেন না। ইহাতে অনুমিত হয় যে তিনি কত বড় অলি আল্লাহ ছিলেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দা রূপে নিজের আমল প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন।সোলামাতুল কাদরী কেতাব হইতে জানা যাইতেছে যে হযরত বড়পীর বাগদাদ হইতে বাহির হইয়া অনেক দূরে ভ্রমণ করতে গেলেন। তিনি একটি নদীর তীরে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন নদীতীরস্থ অধিবাসীরা নদীর বাতাস ও শোভা উপভোগ করিতেছে। মহিলারা কেউবা ঘাটে নামিয়া গোসল করিতেছে কেউবা বা কলসি ভরিয়া পানি লইয়া বাড়ির দিকে ফিরিতেছে বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী গ্রামবাসীদের হইতে কিছুটা দূরে নদীর তীরে বসিয়া আল্লাহ পাকের সৃষ্টি রহস্যের মনোরম দৃশ্যাবলি অবলোকন করিতে লাগিলেন। এমন সময় তিনি শুনিতে পাইলেন গ্রামবাসীদের নদীর ঘাটে একজন মহিলা করুন কণ্ঠে কাঁদিতেছে, তাহার কান্নাকাটি এমন করুণ সুরে উত্থিত হইতে লাগিল যে হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:) - এর কানে গিয়ে পৌছাইল। মহিলার করুণ কান্না শুনে আকাশ বাতাসও যেন কাঁদিতে লাগিল। সিলেটে বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী(র:) -এর অন্তর গলিয়া গেল। তিনি এমন করুণ ক্রন্দন ধ্বনি সয্য করিতে না পারিয়া সে দিকে আগাইয়া গেলে। একজন গ্রামবাসীকে নিকটে দেখিয়া তাহার কাছে মহিলার করুন কান্নার কারণ জানতে চাইলেন। লোকটি মহিলার করুণ বিলাপের কারণ জানিতো সে হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)- এর কাছে বর্ণনা করিল হুজুর সে কথা আর কি শুনিবেন। হযরত ইয়াকুব (আ:) -এর অপেক্ষা অধিক হৃদয় বিদারক কাহিনী।যাহা স্মরণ করিলে পাষাণেরও অশ্রুপাত হয়। ক্রন্দনরতা বৃদ্ধা মহিলা তার একটিমাত্র পুত্র সন্তান ছিল। তাহার বিবাহের সময় হইলে নদীর ওপারে এক গৃহের কন্যার সহিত তাহার বিবাহ দেওয়া হইল। তারিখ মোতাবেক বধূকে গৃহে আনিবার জন্য বরযাত্রীদের নৌকাযোগে কন্যার বারিতে চলিয়া গেল। মহা ধুমধামে বিবাহের খানাপিনা ভোজন করিয়া পরেরদিন আনন্দ-উল্লাস পূর্বক বধূ লইয়া তাহারা বাড়িতে ফিরতেছিল। নদীতে নৌকা আসিয়া পরিলে হঠাৎ আকাশে ঝড় উঠিল। মাঝি-মাল্লারা প্রাণপণে চেষ্টা করিতে লাগিল কিন্তু ঝড়ের কবল হইতে নৌকাসহ বরযাত্রীকে রক্ষা করিতে পারিল না। প্রবল বাতাসে নদীর প্রকাণ্ড ঢেউ উঠিল। প্রায় তিরে প্রছাতেই একটি ঢেউ নৌকাখানাকে উল্টাইয়া ফেলিল। ইহাতে বরযাত্রী সহ বধূ এবং বৃদ্ধা মহিলার পুত্র সকলেই জীবন্ত সমাধি লাভ করিল। কাহারো মৃতদেহ ভাসিয়া উঠিল না। আজ ১২ বছর হইয়া গিয়াছে কিন্তু ওই বৃদ্ধা মহিলা তার পুত্র ও পুত্রবধু করুন মৃত্যুশোক ভুলিতে পারে নাই। পূত্রের কথা মনে হইলেই সে নদীর ঘাটে আসিয়া বিলাপ শুরু করিয়া দেয়। এইভাবে করুন কান্নায় তাহার ১২ বছর কাটিয়া যাইতেছে। আজও সে তাহার পুত্রশোকে অমন করিয়া কাঁদিতেছে। লোকটির নিকট হইতে বৃদ্ধা রমণীর মর্মান্তিক ঘটনা সুনিয়া হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)-এর  হৃদয়ে বেদনা ভরিয়া উঠিল। তিনি এই করুণ কাহিনী সুনিয়া মর্মবেদনায় অস্থির হইলেন, তাহার মন প্রাণ কাঁদিয়া উঠিল তিনি তখন লোকজনদের ডাকিয়া বলিলেন, তোমরা মহিলাকে কন্দন হইতে বিরত করিবার চেষ্টা করো তাকে সান্ত্বনা দাও আল্লাহর ইচ্ছায় সে আবার তাহার নয়নের মণি ফিরিয়া পাইবে। লোকজন মহিলার কাছে গিয়া হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)- এর আশ্বাসবাণী বলিয়া তাহাকে সান্ত্বনা দিতে লাগিল। কিন্তু বৃদ্ধা মহিলার পূত্ররত্ন যে ফিরিয়া আসিবে তাহা যেন সে বিশ্বাস করিতে পারিতেছিলনা। তাহার মর্মবেদনা আর গাঢ় হইয়া পূর্বের চাইতে দ্বিগুন করিয়া কান্নাকাটি শুরু করিয়া দিল।এই অবস্থা অবলোকন করিয়া হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)-বৃদ্ধার নিকট গমন করিলেন।তিনি তাহাকে মোলায়েম কন্ঠে বলিলেন: মা তুমি আর কাদিওনা আমি তোমার কন্দন সয্য করিতে পারিতেছিনা। আল্লাহর ইচ্ছায় আমি তোমার পূত্র এবং তার  সঙ্গিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করিতেছি। তুমি শান্ত হইয়া আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হও আর ধৈর্যধারন কর। হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)-এর কথা শ্রবণ করিয়া বৃদ্ধা মহিলা কিছুটা শান্ত হইল তাহার করুণ কান্না থামিয়ে গেল। 

অতঃপর হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)-লোকজনের কাছ হইতে নির্জন স্থানে আসিলেন নির্জনে বসিয়া মহান আল্লাহর দরবারে হাত তুলে মোনাজাত করিলেন। হে মহা বিশ্বপালক মায়াময় রহমানের রাহিম। করুণাসাগর সে মহা মহিম সবজান্তা অন্তর্যামী পরওয়ারদেগার তোমার ইচ্ছায় নিমেষের সবকিছু সংঘটিত হইয়া থাকে। তোমার আয়ত্তের বাইরে কিছুই নাই। তুমি সবকিছুই একমাত্র একক  নিয়ন্তক। তুমি বৃদ্ধা মহিলার মনোবেদনা দেখিতেছো তুমি জানো কেন বৃদ্ধা মহিলা বার  বৎসর ধরিয়া লোকো সাগরে ভাসিয়া করুন কন্দনে আকাশ বাতাস ভরিয়া তুলিয়াছে। হে করুণাময় আমার মত অধমের মোনাজাত কবুল করো। তুমি বৃদ্ধ মহিলার  স্নেহের পুত্র নয়নের পুটলি সহ বরযাত্রীদের সহ পুত্রবধূকে পূর্বের অবস্থায় ফিরাইয়া দাও। এইভাবে দীর্ঘ সময় ধরিয়া মহান আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করিতে লাগিলেন।অবশেষে মহান আল্লাহর তরফ হইতে বানী শুনিতে পাইলেনঃ হে  আমার প্রিয় বান্দা ১২ বছর পূর্বে যাহারা পানিতে ডুবিয়া মৃত্যু বরন করিয়াছে আবার কিভাবে তাহাদের পূর্বের অবস্থায় ফিরাইয়া দেওয়া যাইবে..?
হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)-প্রতিউত্তরে বলিলেনঃ হে রহমানুর রাহিম তুমি তোমার পবিত্র কালাম পাকে ঘোষনা করিয়াছো,হইয়া যাও, বলিবা মাত্র সঙ্গে সঙ্গে হইয়া যায়। এমন মায়াময়ের পক্ষে যাহারা ১২ বছর পূর্বে মৃত্যুবরন করিয়াছে তাহাদের ফিরিয়ে দেওয়া এমন কি কঠিন কাজ। নিশ্চয়ই তুমি তোমার ক্ষমতা সম্পর্কে সত্য কথা বলিয়াছো। অতএব আমার মোনাজাত কবুল করো। মহান আল্লাহ পাক আবার বলিলেন হে কুতুবে রব্বানী গাউছুলআজম হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)-তুমি কেন বুঝতে পারছনা যে ১২ বছর পূর্বে মৃত দেহের কি কোন অস্তিত্ব আছে, এতদিনের মৃতদেহের হাড় পর্যন্ত হজম করিয়া ফেলিয়াছে নদির প্রানিকুলেরা তাহলে তুমি ভাবিয়া দিখিতেছনা কেন জীবিত করা সম্ভব কিভাবে হইবে। হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)- বলিলেন হে রব বিশ্ব প্রভু ইহা তুমি কি বলিতেছ। তুমি যাহা বলিতেছ ইহা কিভাবে বলিতেছ।আমি বুঝিতে পারিতেছি না। রোজ কিয়ামতের দিন যখন তোমার সৃষ্টির কোন চিন্হই থাকিবে না। সবই ধুলিকনায় পরিণত হইবে সেইদিন তুমি তোমার সৃষ্টজাতিকে কিভাবে পুনরুন্থান ঘটাইয়া বিচারকার্য সম্পন্ন করিবে...?
মহান আল্লাহ তায়ালা তাহার প্রিয় বান্দার যুক্তিযুক্ত প্রশ্নের উত্তরে জানাইলেন হে প্রিয় বান্দা হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)-তুমি এইভাবে চিন্তা করিও না তুমি যা বলতেছো আমার অজানা নয় চাহিয়া দেখো তোমার সৃষ্টিকর্তা সবকিছুই করিবার ক্ষমতা রাখেন তিনি মহা ক্ষমতাশীল অদ্বিতীয় পরাক্রমশালী।
এই বাণী শ্রবণ করিয়া হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)-চোখ মেলিয়া নদির ঘাটের দিকে তাকাইলেন।তিনি দেখিতে পাইলেন সেখানে একখানা সুসজ্জিত নৌকা ভিরিয়াছে।নৌকার ভিতরে বর,বধু,বড়যাত্রীরা খোশগল্পে মাতিয়া রহিয়াছে।মাঝিমাল্লারা কুলে নামিয়া নৌকা খানা বাধিতেছে।অতঃপর মহা আনন্দ কোলাহল করিয়া বর যাত্রীরা তিরে নামিল।এবং বর ও বধূ  নামিল।তাহাদের পরনে বিবাহের উত্তম সাজ- সজ্জা রহিয়াছে।যেমন পোশাক পরিচ্ছেদ পরিয়া তাহারা রওনা হয়েছিল তেমন পোশাক পরিচ্ছেদ পরিয়াই নদির ঘাটে নামিল। যেন ইহার মদ্ধে কোন সময় বা ঘটনার অবতারণ হয় নাই।
তখনই চারিদিকে হৈ চৈ পড়িয়া গেল।গ্রামবাসীরা মহান আল্লাহর কুদরত দেখিবার জন্য নদির ঘাটে ছুটিয়া আসিল।যাহারা নদির ধারেই ছিল তাহারা আল্লাহর ক্ষমতা দেখিয়া পাথরের মত স্থির হইয়া দারিয়ে রহিলেন।বৃদ্ধা মহিলা তাহার পূত্র ও পূত্রবধুকে ফিরিয়া পাইয়া কোলের মধ্যে জরাইয়া ধরিয়া আল্লাহ পাকের শোকর গুজারি করিল। হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)-এই দৃশ্য দেখিতে দেখিতে সেখানে উপস্থিত হইলেন।বৃদ্ধা মহিলা তাহার পায়ের কাছে লুটাইয়া পরিয়া দোয়া করিল হুজুর আল্লাহ পাক আপনার মঙ্গল করুন। আপনার দোয়ার বরকতে আমি ১২ বছর পর আমার হারানো মানিক ফিরিয়া পেয়েছি। 
অতঃপর হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)-তাহাদের জন্য দোয়া করিয়া স্বগৃহে ফিরিয়া আসিলেন।

পরবর্তী অর্ধায় 
নারী কে পুরুষে রুপান্তর করলেন বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জীলানি (র:) 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ