আল-কুরআনের আলো

Md: Robiul islam আমি মোঃ রবিউল ইসলাম আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে স্বাগতম, আমি নিয়মিত পোষ্ট করে থাকি, আর নিয়মিত পোষ্ট-এর আপডেট পেতে এখনই আল-কুরআনের আলো �� ওয়েব পেজটি সাবস্ক্রাইব করুন ধন্যবাদ।

৪১ তম অধ্যায় অন্তিম শয্যায় বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)

লেখকঃ মোঃ রবিউল ইসলাম
            ৪১ তম অধ্যায়
অন্তিম শয্যায় বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জীলানি (র:)

মানুষ মরণশীল,এক বাক্য সকলের জন্য অবধারিত। মৃত্যুর স্বাদ প্রত্যেক জীবকেই একবার উপভোগ করতে হবে। নবী-রাসূল হইতে শুরু করিয়া পীর-আউলিয়া কেহই এ হইতে মুক্তি পাননি। তাহা কাহারও জন্য অপেক্ষমান থাকিবে না বরং প্রতিমুহূর্তে সম্মানের অগ্রসর হইতে থাকিবে। হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (র:)- এ জীবন চক্র থেমে থাকে নাই (৫৬১)হিজরি সনের রবিউস সানি মাসের শুরুতেই তিনি রোগশয্যায় সায়িত হইয়া পড়েন। 
রোগাক্রান্ত হওয়ার পর তাহা আর আরোগ্যের দিকে না গিয়ে ক্রমবৃদ্ধি পাইতে লাগিল। তাহার বুঝতে আর বাকী রইল না যে  তাহার এবার অবসর গ্রহণের সময় সমাসীন। তাহার পার্থিব জীবন কালে সমাপ্তির সময় এসেছে। দেখতে দেখতে পিরা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং তিনি স্থায়ীভাবে শয্যাশায়ী হইয়া পড়িলেন। পীড়ার খবর দেশ-বিদেশে ছরিয়া পরিল, তাকে এক নজর দেখার জন্য সারা দুনিয়ার শতশত অলি -দরবেশ, আলেম-ওলামা, ধনী-দরিদ্র,আত্মীয়-স্বজন, আত্মাপ্রিয় ভক্ত এবং সর্বসাধারণ সকল লোক নদীর স্রোতের ন্যায় ভাসিয়া আসিতে লাগিল। 
ভক্ত মুরিদ এবং প্রিয় সহচরগণ তাহাকে দিবারাত্রি ঘিরিয়া থাকিতে লাগিল।
হযরত শেখ আব্দুল ওয়াহাব(রহ:)- হইতে বর্ণিত তিনি বলিয়াছেন যে যখন হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (র:)-  এর অন্তিম সময় সমাসীন তখন তাঁহার পরম ভক্ত ও মুরিদ বিশেষ প্রার্থনা করিলেন তিনি অতি ধীরে ধীরে উপস্থিত সকলের জন্য তথা সারা জগত বাসীর জন্য অন্তিম নসিহত প্রদান করিলেন। 

আরবি:
আলাইকা বিতাকওয়াল্লাহি অ  ত্বয়াতিহি অলা তাখাফ আহাদাও অলা  কারজুহু  অলা তাছিক্ব বি আহাদিন ছিওয়াল্লাহি আর্যযা অ জাল্লা অলা তা'তামিদ ইল্লা আলাত্তা ওয়াহীদাল্লাযী আলাইহি এজমাউন  কুল্লি।

বাংলা অর্থ:
অর্থাৎ: কেবল আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করো এবং কেবল তারই ইবাদত কর। আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না এবং কাহারও নিকট কোন আশাও করিবে না আল্লাহ ছাড়া।আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপর নির্ভর করবে না। এবং একমাত্র তাওহিদ ব্যতীত অন্য কিছুর উপর বিশ্বাস করবে না যেহেতু তাওহীদ সম্পর্কে সকলেই একমত।।

হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (র:)- নিখিল জগৎ আঁধার করিয়া জগৎবাসী কে দুঃখ সাগরে ভাসাইয়া ইহজগতে ছাড়িয়া পরকালে পারি জমাবার আশঙ্কায়,তাহার সাথে আখেরি মোলাকাত করিতে এবং তাহার পবিত্র মুখের অন্তিম উপদেশ বাণী শ্রবণ করিতে দূর-দূরান্ত হইতে অসংখ্য লোক তাহার সমীপে হাজির হইলেন। সকলেই মুখ বমুখ বিষন্ন চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হৃদয় দুঃখে ভরা কান্ত সকলেই, যেন আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় সম্পূর্ণরূপে হইয়া গিয়াছিল। সকলে যেন মুখের ভাষা হারাইয়া ফেলিয়াছে। এ সময় হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(র:)- বলিয়া উঠিলেন

আলা লা উবালী বিশাইয়িন আলা বি মালাকাত মাউত।

অর্থাৎ: আমি কোন কিছুকে এমনকি মৃত্যুকেও পরোয়া করিনা আনোয়ারের আহমদী নামক কিতাবে হযরত সাইয়েদ আহমদ রাহমাতুল্লাহ অন্তিম কালে হযরত সৈয়দ আব্দুল ওয়াহাব রাহমাতুল্লাহ অতি বিনীত এবং করুণা ভাবে তাদের পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা হুজুরের সমীপে আরজ করিয়াছিলেন।আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান এ মুহূর্তে আপনার এ হতভাগ্য সন্তানকে আখেরি নসিহত প্রদান করুন।

 হযরত গাউছুল আজম হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (র:)- বলিলেন হে আমার প্রিয় সন্তানগণ আমি অতি সংক্ষেপে কিছু নসিহত বিদায় মুহূর্তে তোমাদের জন্য রাখিও যাইতেছি কখনো তোমরা এর অন্যথা করিবে না।উপদেশগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। হে আমার পুত্রগণ তোমরা কখনো পাপ পথে পা বাড়াইয়া নরকের দিকে অগ্রসর হইবে না জাগতিক মায়াজালে নিজেদেরকে আবদ্ধ করিয়া সঞ্চিত সৎকর্ম বিনষ্ট কোরিয়া আখিরাতের সম্বল হারিয়ে ফেলবে না। একান্তমণে প্রকাশ্য ও গোপনে আল্লাহতালার বন্দেগী করিবে।প্রত্যহিক নামাজ আদায় করিয়া শরীয়তের বিধান নিয়মিত পালন করবে সেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া আর কাহাকেও ভয় করবে না।জীবনের সুখ-দুঃখ বিপদ-আপদ ভালো-মন্দ অভাব-অনটন সর্ব অবস্থায় একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভর করবে যেকোনো প্রকার বিপদাপন্য  বা দুঃখ দুর্দশাগ্রস্থ হইবে না। এবং তাহার সাথে অন্য কাউকে শরীক করিবে না কেননা সত্যি তাহার কোনো শরিক নাই।এ একত্ববাদ প্রচারে লক্ষ্যেই নবী ও রাসূলগণ এবং তাহাদের ওয়ারিশগণ এখনো আসিতেছেন। যদি কেউ আমার উসিলার সাথে দয়াময় প্রভুর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করে নিশ্চয়ই তা পূর্ণ হইবে যদি একান্তই পূর্ণ না হয় তবে খুবই একাগ্রতার সাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করিয়া (১১) বার সূরা ইখলাস এবং (১১)  বার দরুদ শরীফ পাঠ করিয়া একবার আমার নাম উচ্চারণ করিয়া আল্লাহ তাআলার কাছে মনোবাঞ্ছা প্রকাশ করিবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তাহার পূর্ণ করিবেন। কিন্তু মনে রাখিবে যদি কেহ আমার নামে কোন কিছু মানত করিয়া অথবা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা না করিয়া আমার নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করিয়া থাকে তবে সেই মহাপাপী জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আখেরি উপদেশ প্রদান করিতে করিতে চরম মুহূর্তে অত্যাসন্ন হইয়া পড়িলে হযরত গাউছুল আজম বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী উদ্দেশ্য করিয়া বলিলেন হে আমার প্রিয় পুত্রগণ আমার নিকট হইতে তোমরা একটু দূরে সরিয়ে বস।জানিয়া রাখবে আমি এখন তোমাদের সাথে প্রকাশ্যভাবে থাকলেও তোমাদের এবং অন্যান্যদের সাথে আমার আসমান ও জমিনের দূরত্ব সৃষ্টি হইয়াছে। স্মরণ রাখবে এখানে তোমরা ছাড়া অন্য সম্মানিত ব্যক্তিদের আগমন ঘটেছে যদিও তোমরা তাহাদের দেখিতে পাও না অতএব তাঁহাদের জায়গা ছাড়িয়া দাও এবং তাদের প্রতি সদাচরণ প্রদর্শন করো।এখানে আল্লাহর রহমত আবির্ভূত হইয়াছে তোমরা সম্মানিত আগন্তুকদের স্থান সংকুচিত করিয়া দাও।

পরবর্তী অধ্যায় 
বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (র:)- এর ইন্তেকাল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ