লেখক:মো:রবিউল ইসলাম
৬ষ্ঠ অর্ধায় হযরত রাবেয়া বসরীর কুমারী জীবন গ্রহণ
বসরার হাসান- যার সঙ্গে কিংবদন্তিগুলি রাবেয়াকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে দিয়েছে, ( যদিও হাসান থেকে সত্তর বছরেরও বেশি আগে মারা যান) এবং অন্য অন্যান্যরাও রাবেয়ার কাছে এসেছিলেন তাকে স্বামী গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিতে। এবং বসরার সুফিদের মধ্যে থেকে তার ইচ্ছামত যে কাউকে স্বামী রূপে নির্বাচন করার প্রস্তাব নিয়ে। এই প্রস্তাবে জবাবে রাবেয়া বলেছিলেন ঠিক আছে আমি রাজী আপনাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বিদ্ধান বলুন যাকে আমি বিয়ে করতে পারি। তারা বলেছিলেন বসরার হাসান। তখন তিনি তাকে বলেন যদি আপনি আমার চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন তাহলে আমি আপনার স্ত্রী হব।হাসান বলেন জিজ্ঞাসা করুন এবং যদি আল্লাহর অনুমতি হয় অর্থাৎ সম্ভব হয় আমি আপনার প্রশ্নের জবাব দেবো।
তিনি তখন জিজ্ঞাসা করলেন:-
1... জগতের বিচারক কি বলবেন যখন আমি মারা যাবো...? আমি জগৎ থেকে একজন মুসলিমরূপে বেরিয়ে এসেছি না একজন কাফের রূপে..?
হাসান জবাব দিলেন
এত গুপ্ত বিষয়ক গুলির অন্তর্গত একমাত্র মহামহিম আল্লাহ তায়ালাই জানেন
2... প্রশ্ন করলেন যখন আমাকে কবরে রাখা হবে এবং মুনকার নাকির আমাকে প্রশ্ন করবেন তখন আমি তাদেরকে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারব কিনা...?
হাসান জবাব দিলেন এওতো গুপ্ত বিষয়ক. এরপর
রাবেয়া
3 য় প্রশ্ন করলেন যে কোন পুনরুত্থান দিবসে লোকদেরক একত্রিত করা হবে এবং কর্মবিবরণীগুলি বিতরণ করা হবে, কাউকে তার ডান হাতে কাউকে তার বাঁ হাতে তখন কি আমারটি আমার ডান হাতে দেওয়া হবে বাঁ হাতে..?
এর জবাবে হাসান শুধু একটু বলতে পারলেন এটাতো গুপ্ত বিষয়গুলির অন্তর্ভুক্ত অবশেষে রাবেয়া জিজ্ঞেস করলেন
4.. বিচার দিনের যখন মানবকূলকে আহ্বান করা হবে কিছু লোককে স্বর্গের দিকে আর কিছু লোককে নরকের দিকে তখন ওই দলের মধ্যে কোন দলে আমি থাকবো...?
আগের মতোই হাসান জবাব দিলেন এত গুপ্ত বিষয় এবং আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না গোপন বিষয়ের খবর তিনি সমস্ত মহিমা গরিমার অধিকারী আল্লহ। তখন রাবেয়া তাকে বললেন অবস্থা যখন এই রকমই এবং এই চারটি প্রশ্ন নিয়েই আমাকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তখন কি করে একজন স্বামীর কথা ভাবতে পারি.যাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। কথিত আছে তিনি তার প্রত্যাখ্যান নিম্নলিখিত সুন্দর পত্র দিয়ে জোরদার ভাবে পেশ করেন। যদিও নিঃসন্দেহে বলা যায় না এগুলো তার ঐ রচিতঃ
* হে আমার বন্ধু আমার শান্তি নির্জনতাতেই
এবং আমার প্রেমাস্পদ সর্বদা আমার সঙ্গে রয়েছেন
তার ভালোবাসার কোনো বিকল্প আমি খুঁজে পাই না এবং মৃত্যুশীল জীবকুলের মধ্যে তার ভালোবাসা আমার জন্য এক পরীক্ষা, যখনই তার রূপ আমি ভ্যান করি, তিনি আমার মিহরাব দিকেই আমার কিবলা।
ভালোবাসার পীড়নে (পূর্ণ পরিতৃপ্তির আগেই)
যদি আমি মরে যাই
আহা জগতে আমার উদ্বেগ ও আমাদের দুর্দশার জন্য অপেক্ষ,
হে আত্মাসমূহের নিরাময়কারী আমার অন্তর বাসনা বিভোর
আপনার সঙ্গে মিলনের প্রচেষ্টা আমার আত্মাকে সুস্থতা দান করেছে,
হে আমার আনন্দ আমার চিরন্তন জীবন,
আপনি আমার জীবনের মূল উৎস ছিলেন,
এবং আপনার কাছ থেকে আমার আহাদ এর উৎপত্তি ও প্রবাহ,
আমি সমস্ত সৃষ্ট জীব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছি,
আমার আকাঙ্ক্ষা আপনার সঙ্গে মিলন,আমার বাসনা লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে এটাই
এই গল্পটি একাধিক বর্ণনায় এসেছে এবং যদিও সময়ের দিক থেকে বিচার করলে এটা প্রায় অসম্ভব, হাসান ওই ঘটনা বর্ণিত পাণিপ্রার্থী ছিলেন তবুও এটা খুবই সম্ভব যে, ওই ঘটনা অন্য কোন বিবাহ প্রস্তাবের সঙ্গে জড়িত। আরেকটি কাহিনীতেও রাবেয়াকে হাসানের বিবাহ প্রস্তাব দেওয়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে যার প্রতিবেদনে রাবেয়ার জবাবে একই মনোভাব ছিল হাসান নাকি বলেছিলেন আমার ইচ্ছা আমরা দুইজনে বিয়ে করি এবং অঙ্গীকারবদ্ধ হই। রাবেয়া জবাব দিয়েছিলেনঃ
বিবাহ চুক্তি তাদের জন্য যাদের জাগতিক অস্তিত্ব রয়েছে অর্থাৎ যারা এই বস্তুজগতের বিষয় নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। এখানে (অর্থাৎ আমাদের ক্ষেত্রে) অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কারন আমি আর আমি নেই এবং আমার জৈবিক সত্তা থেকে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আমার অস্তিত্ব এখন তার (অর্থাৎ আল্লাহর মধ্যে) বিলীন এবং আমি সম্পূর্ণভাবে তারি আমি তার হুকুমের ছায়াতলে রয়েছি। বিবাহ চুক্তিতে সম্মতি নিতে হলে তার কাছ থেকে নিতে হবে আমার কাছ থেকে নয়। এ প্রসঙ্গে বলা যায় পুত পবিত্র জীবন যাপনের ব্যাপারে রাবেয়া তার স্বর্গীয় বরকে বরণ করেছিলেন। এবং পার্থিব বিবাহের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিলেন। যদিও তা হতে পারত তার ঘনিষ্ঠ সতীর্থদের মধ্যে কারও সঙ্গে।
0 মন্তব্যসমূহ