আল-কুরআনের আলো

Md: Robiul islam আমি মোঃ রবিউল ইসলাম আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে স্বাগতম, আমি নিয়মিত পোষ্ট করে থাকি, আর নিয়মিত পোষ্ট-এর আপডেট পেতে এখনই আল-কুরআনের আলো �� ওয়েব পেজটি সাবস্ক্রাইব করুন ধন্যবাদ।

২য় অর্ধায় ইসলামে আউলিয়া কেরাম,পীর ও মুরশীদ এবং তরিকতের প্রয়োজনীয়তা

লেখক: মো:রবিউল ইসলাম
                     ২য় অর্ধায়
ইসলামে আউলিয়া কেরাম,পীর ও মুরশীদ এবং তরিকতের প্রয়োজনীয়তা

আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর মোল্লা-মৌলভী আছে যারা কথায় কথায় ওয়াজ নসীহতে বলে বেড়ায় পীর শব্দটি কোরআনে নেই,পীর ধরার প্রয়োজন নেই,পীরের কাছে গিয়ে লাভ নেই,পীরের দরবারে মানত করা উচিৎ নয়।পীরের কাছে যাব কি করতে...?আসলে এটা একটা ব্যাবসা।এসব মোল্লা-মৌলভীরা ইসলামের সুমহান বাণী শুনানোর পরিবর্তে মানুষকে আসলে ধোকাই দিচ্ছে।মুখে কোরআন সুন্নাহ বলে বলে কোরআন সুন্নাহকে পদদলিত করছে।তাদের যদি সামান্যতম জ্ঞানও থাকতো তবে বলতো না যে পীর শব্দটি কোরআনে নেই।কারন কোরআন শরিফ আরবি ভাষায় নাযিল হয়েছে আর পীর শব্দটি হলো ফারসী শব্দ।তাই ফারসী শব্দ কোরআনে থাকার প্রশ্নই ওঠে না।এটা কোরআনে আছে ওটা নেই,ওটা শিরক,এটা বিদআত,এটা কুফর ইত্যাদি বলে বলে মানুষকে ধোকা-ফিৎনার মধ্যে ফেলছে।মুসলমানদের দলে উপদলে বিভক্ত করে ফেলছে।অথচ আল্লাহ পাক বলেন-
ফিৎনা ফ্যাসাদ (জ্বালাও,পোরাও,দাঙ্গা,গৃহযুদ্ধ,দল-উপদলে বিভক্ত,ধর্ষন,ধোকা দেওয়া,মিথ্যা গীবত) হত্যার চাইতেও নিকৃষ্ট [ সূরা বাকারা-আয়াত ১১৯ ]
আল্লাহ পাক আরও বলেন-
জালিমদের জন্য আল্লাহর তরফের কোন সাহায্যকারী নেই,আল্লাহ কখনোও জালিমদিগকে হেদায়েত করেনা।(সূরা মায়িদা-আয়াত ৫১,৫৭,৭২)
বর্তমান যুগে কতিপয় নামধারী আলেম কোরআন,সুন্নাহ,ইজমা,কিয়াসের জ্ঞানের অপরিপক্কতার কারনে পীর ধরার প্রয়োজন নেই,শবেবরাত নেই,আজানের পরে দোয়া নেই,নামায পরে মোনাজাত নেই,মিলাদ- কিয়াম কোরআন হাদিসে নেই,তারাবির নামায ৮ (আট) রাকাত,রাসূল (সা:)আমাদের মতো মানুষ,জানাযার পরে দোয়া নেই ইত্যাদি
বলে বেরায়।
উপরোক্ত আয়াত হতে আমরা জানতে পারলাম যে কোরআনের অপব্যাখ্যা করে যারা সমাজে বিভেদ- সৃষ্টি,ফেৎনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে তারা আসলে জালিম,মুনাফিক।জালিমের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।তথা পথপ্রদর্শক (মুরশিদ)তথা পীর নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন -
ওয়া মাই ইয়ুদলিল ফালান্ তাজ্বিদালাহু ওয়ালিয়াম মুরশিদা
অর্থৎ :-আল্লাহ যাকে হিদায়েত করেন (সৎ পথ দেখান)সে হেদায়েত পায় এবং যাকে পথভ্রষ্ট (গোমরাহ)করেন তার জন্য কোন অলিয়ে কামিল মুরশিদ নেই।(সূরা কাহাব -আয়াত ১৭)

উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় অধিকাংশ মোহাদ্দিসগন বলেন - ঈমান হিফাজতের জন্য কামেল পীর ও মুর্শিদের প্রয়োজনিয়তা অনস্বীকার্য (অপরিহার্য) পীর একটি ফারসি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ জ্ঞানে বৃদ্ধ।
যে ব্যাক্তি কুরআন সুন্নাহর আলোকে বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক ভাবে সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে আল্লাহ ও রাসুলের জাত ও সিফাত সর্বদা মিশে থাকে তাকেই হক্কানী পীর বা কমেল ইনসান বা অলি আল্লাহ বলে।
আর তাদের দিক নির্দেশনার পথকেই তরিকত বলা হয়।তরিকতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
তরীকতের সমস্ত কাজই কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত হয়,যদিও অধিকাংশ লোক সে বিষয়ে অজ্ঞ।পীর ধরার প্রয়োজনিয়তা বা প্রদর্শকের (পীর মুর্শিদ ) প্রয়োজনিয়তার কথা কুরআনের বহু আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে -নিন্মে তা তুলে ধরা হলো।
১- ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকিম,সিরাতাল লাজিনা আন আমতা আলাইহিম
অর্থ: হে আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।তাদের পথে (তরীক্বতে ) যাদৃরকে আপনি অনুগ্রহ করেছেন।(সূরা ফাতিহা -আয়াত ৫,৬)
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা যায় যে,মহান রবের সমস্ত নিয়ামতের মধ্যে সর্বোচ্চ নিয়ামত হচ্ছে সরল সঠিক পথ বা অটল পথ।
অটল বা সরল পথের পরিচিতি হচ্ছে যেটার উপর আল্লাহর অলীগণ নেককার বান্দাগন থাকে কেননা তারাই হচ্ছে মহান আল্লাহর পুরস্কারপ্রাপ্ত বান্দা।হিদায়েত শুধু নিজের প্রচেষ্টায় পাওয়া যায়না বরং মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মাধ্যমে পাওয়া যায়।(তাফসীরে কানযুল ঈমান ও নুরুল ইরফান)
-ইয়া আইয়্যুহাল লাজিনা আমানুত্তাকুল্লাহা ওয়ব তাগু ইলাইহিল ওসীলাতা ওয়া জাহেদু ফি সাবিলিহি লায়াল্লাকুম তোফলিহুন।
অর্থ : হে ঈমানদারগন,তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নিকট লাভের জন্য ওসীলা (অন্বেষন) তালাশ করো।এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেন তোমরা মুক্তি পাও।(সূরা মায়েদা-আয়াত -৩৫)
এখানে ওসিলা শব্দের আভিধানিক  অর্থ মাধ্যম,মধ্যস্ততা ইত্যাদি।আর ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় ওসিলা হচ্ছে-আল্লাহ তায়ালার নিকট কোন এক নেক আমল(নামায রোজা হজ্ব যাকাত ইত্যাদি )বা তার কোন মাহবুব বান্দার মাধ্যমে কোন কিছুর জন্য প্রার্থনা করা।
যেমন পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-তোমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমেওসীলায় সাহায্য প্রর্থনা কর।(সূরা বাকারা -আয়াত -৪৫)
এই আয়াত দ্বারা বোঝা গেল যে,নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নিকট হতে কিছু পাওয়ার জন্য ওসীলা গ্রহন করতে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ প্রদান করেন।আল্লাহর মাহবুব বান্দা তথা নবী রাসুল,অলি আল্লাহদের ওসীলা ধরা ফরয।যা বাতিল প্রন্থী কিছু ওহাবী মৌলভী নাযায়েজ ফতোয়া দিয়ে  জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।আর বলে এটা কুরআন হাদিসের বহিরভ্রুত অথচ কুরআন হাদিসের আলোকে ওসীলা ধরা যে জায়েয তার অসংখ্য প্রমান রয়েছে।উল্লেখিত সূরা মায়েদার ৩৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে কানযুল ঈমানে দেওয়া আছে যে,
মুসলমানদের আমলের সাথে সাথে নবী ও ওলীগনের ওসীলাও তালাশ করা চাই।কেননা আমলগুলোর কথাতো (আল্লাহকে ভয় কর ) এর মাধ্যমে এসে গেছে।অতপর ওসীলা তালাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরে রুহুল বয়ানে বলা হয়েছে যে - জেনে রাখো এই আয়াতে করিমায় সুস্পষ্টভাবে ওসীলা অবলম্বন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।এবং এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।কেননা ওসীলা ব্যতিত আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা অসম্ভব।হক্কানি ওলামায়ে কেরাম ও তরীকতের প্রকৃত পীর গনই হচ্ছেন অসীলা।
সৃষ্টির সবকিছুই একে অপরের সাহায্য সহযোগিতা বা মাধ্যম ছাড়া অচল।সুতরাং অসীলা বা মাধ্যমকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।তাই আল্লাহকে পাবার উদ্দেশ্যে নবী ও অলীদের মাধ্যমে ওসীলা গ্রহন করা আল্লাহ পাকের নির্দেশ।এর বিরোধিতা করা কুফরির নামান্তর।
অতএব পরিশেষে বলা যায় যদি কোন অলী ভন্ড পীর সেজে অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষকে প্রতারিত করে তবে সেই পীর কে পরিহার করাই সঠিক পথ।আর সঠিক পীর কখনই মানুষ কে বিপদের পথে ঠেলে দেয়না।আর কিছু কিছু মুরিদের জন্য পীরের বদনাম হয়।

পরবর্তী অর্ধায়
বেলায়েতের সম্রাট গাউসুল আজম বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ