আল-কুরআনের আলো

Md: Robiul islam আমি মোঃ রবিউল ইসলাম আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে স্বাগতম, আমি নিয়মিত পোষ্ট করে থাকি, আর নিয়মিত পোষ্ট-এর আপডেট পেতে এখনই আল-কুরআনের আলো �� ওয়েব পেজটি সাবস্ক্রাইব করুন ধন্যবাদ।

30 তম অর্থায় হিংসার পরিনাম



লেখক : মো: রবিউল ইসলাম

              * 30 তম অর্ধায়*
   ...........হিংসার পরিনাম........

*  আওয়ারিজুল আখইয়ার নামক কিতাব হইতে জানা যাইতেছে যে :-
একবার হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) ভুনা মুরগির ডিম হইতে বাচ্চা বাহির করিয়াছিলেন।এবং
তাহার দেয়া পত্র পাঠ করিয়া তৎক্ষণাৎ এক হিংসুক সাধু মৃত্যুমধ্যে পতিত হইয়াছিল।

বিস্তারিত :-
হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) বাগদাদ নগরিতে বসবাস করিলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শহরে যাতায়াত করিতেন।কোথাও কোথাও কিছু কাল অবস্থান করিতেন।তাহার এইরুপ ভ্রমনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিপথগামি জনপদকে সৎপথে আনয়ন করা।আল্লাহর দ্বীনে দাখিল করা।তিনি আল্লাহর দুনিয়ার সকল সৌন্দর্য দেখিতেন এবং সৃষ্টির রহস্য বুঝিবার চেষ্টা করিতেন।একবার তিনি বাগদাদ নগরি হতে বাহির হইয়া বিভিন্ন জনপদে ভ্রমন করিয়া এক শহরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।উক্ত শহরটি ছিল স্কাইমুন্দর। হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) শহরটির নানা মুখ সৌন্দর্য দেখিয়া মুগ্ধ হইলেন।তিনি এক সময় ঘুরিয়া ফিরিয়া এক হোটেলের সামনে দিয়া যাইতেছিলেন।তিনি দেখিতে পাইলেন হোটেলের জনৈক কর্মচারী উনুনের উপর কড়াই বসাইয়া কতকগুলি ডিম উহাতে ভাজিতেছে।
হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  উনুনের পাশে দারাইয়া গেলেন।তিনি ডিমগুলি ভাজিতে দেখিয়া মনে মনে বলিলেন।হায় আল্লাহ যদি এই ডিমগুলা এমন করে ভাজা না হইতো তবে উহা হইতে বাচ্চা বাহির হইয়া মনের আনন্দে কি সুন্দর খেলা করিত।
হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  এর এরূপ ভাবনার শেষ হইতেই এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়া গেল।ভাজা ডিমগুলি হইতে সঙ্গে সঙ্গে কতকগুলি বাচ্চা বাহির হইয়া কড়াই হইতে উরিয়া রাস্তার উপর আসিয়া পরিল এইরূপ ডিম ভাজিবার জন্য কড়াইতে ছাড়া হয় অমনি ডিম হতে বাচ্চা হয়ে বের হয়ে আসে।এবং হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) এর পিছ পিছ হাটতে শুরু করে।এইরূপ অলৌকিক কান্ড দেখিয়া উপস্থিত লোক সকল হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) কে সম্মান করিয়া তথায় অবস্থান করিতে অনুরোধ করিল।
হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  স্থানীয় লোকজনের আগ্রহ দেখিয়া তথায় অবস্থান করেন।এবং তাহাদের ইসলামের বিধি বিধান শিক্ষা দিতে লাগিলেন।তাহার মধুর  ব্যাবহার এবং গুন দেখিয়া অল্প সময়ের মধ্যেই বিপথগামি অসংখ্য লোক হিদায়াত লাভ করিল।অমুসলিমরা দলে দলে তাহার নিকট আসিয়া ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিতে লাগিল।মুসলমানেরা তাহার নিকট মারেফতি শরীয়ত বিষয় জ্ঞান অর্জন করিতে লাগিল।
কয়েকদিনের মধ্যেই হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  এর নাম যশ সারা শহরে ছড়াইয়া পড়িলে লোকজনের ভীর লাগিয়া গেল, হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) হিদায়াতের কাজ চালাইয়া যাইতে লাগিলেন।
ঐ শহরে এক সাধু ব্যাক্তি বসবাস করিত,তাহার কিছু সংখ্যক মুরিদও ছিল।সেই সকল মুরিদও ছুটিয়া আসিল হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  এর নিকট, ইসলামের গুরুত্ব লাভের আশায়।এইভাবে অল্প সময়ের মধ্যে নগরীর বাইরে তাহার কথা ছড়াইয়া পড়িল।এবং প্রত্যেকদিন শত শত লোকের সমাগম হইতে লাগিল।
উক্ত সাধুর কানেও হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  এর আশ্চর্য কারামতের খবর প্রছাইলো।দলে দলে শত শত লোক যে কোন বিষয়ে জানিতে বা শিখিতে আসিতে লাগিল।এতে করে সাধুর সাধুত্ব খর্ব হইতেছে।বিদেশি আগন্তুকের দিকে লোক সকল আকৃষ্ট হইয়া পরিতেছে ইহাতে সাধুর প্রত্যেকদিনেই সোনাম নষ্ট হইতেছে।এইরূপ কিছুদিন চলিতে থাকিলে তাহার আস্তানায় আর কেহ আসবেনা,তাহার বুজুর্গীও থাকবে না।উক্ত মুরিদ শুন্য হইয়া একাকি পরিয়া থাকিবে।এইরূপ ভাবিয়া সাধুটি হিংসায় জলিতে লাগিল।সে হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  কে সয্য করিতে পারিতেছিলনা।তাই হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) কে শহর ত্যাগ করাইতে বদ্ধ পরিকর হইল।
একদা সাধু ব্যাক্তিটি অত্যন্ত কর্কট ভাষায় হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  এর নিকট একখানি পত্র লিখিল।তাহাতে তাহাকে শহর ছারিয়া অনতি বিলম্বে চলিয়া যাইতে বলা হইল।

চিঠিটি এরূপ:
হে মুসাফির তুমি কয়েকদিনের জন্য আমাদের এই লোকলয়ে আসিয়াছ।তুমি এই শহরের একজন ক্ষনিকের মেহমান মাত্র। কিন্তু তুমি এ কি করিতেছো...?
বিভিন্ন রকমের আশ্চর্য কারামত দেখাইয়া লোকদিগকে বোকা বানাইয়া তোমার দিকে টানিয়া লইতেছো।তোমার এইরূপ করিবার কারন হইতেছে যে তুমি আমাকে জনসমপেক্ষ হেয় প্রতিপন্ন করিবার উদ্দেশ্যে রহিয়াছো।কারামত দেখাইয়া তুমি নিজেকে বড় একজন দরবেশরূপে জাহির করিবার মহড়া দিতেছ।
এই শহরের লোকেরা জাহাতে আমার চাইতে বড় দরবেশ বলিয়া মানিয়া লয় সেই উদ্দেশ্যে তুমি এইরূপ করিতেছ।
ইহাতে আমার সুনাম নষ্ট হইয়া যায় ইহাই তুমি চাহিতেছ।তোমার এইরূপ হীন উদ্দেশ্যে লক্ষ করিয়া আমি চুপ করিয়া থাকিতে পারিনা।তুমি তো আমার শহরে আসিয়া আমরই বিরুদ্ধাচার করিতেছ।আমার শত শত শিষ্য তোমার কাছে গিয়া ভিরিয়াছে।
এবং তোমার মুরিদ হইতাছে।তাহারা এতদিন আমার কাছেই আসিত এখন তোমার মায়াজালে আবধ্য হইয়া পরিয়াছে।অতঃপর তোমাকে জানাইয়া দিতাছি যে যদি মান ইজ্জত ও গুন গরিমা রক্ষা করিতে চাও তাহা হইলে অনতি বিলম্বে আমাদের শহর হইতে অন্যত্ব চলিয়া যাও।আর আমার কথা অমান্য করিয়া এখানে থাকিতে চাহিলে ক্ষতিগ্রস্ত হইবে।
হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  সাধুর চিঠি পরিয়া উহার মর্মার্থ উপলব্ধি করিতে প্রয়াস পাইলেন।ক্ষনিকের ভাবনার পর তাহার মনে ভাসিয়া উঠিল পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি।যাহাতে মহান আল্লাহ পাক ফরমাইলেন- আকাশ জমিনে যাহা কিছু রহিয়াছে সকলই আল্লাহর জন্য।

হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  এর সম্মুখে আল্লাহর বিধি বিধান পরিস্কার হইয়া গেল।তিনি সাধুটির অহংকার বুঝিতে পারিলেন।সঙ্গে সঙ্গে চিঠির উত্তর লিখিতে বসে গেলেন।

এবং তিনি সাধুর উদ্দেশ্যে লিখলেন :-

*  তুমি জানিয়া রাখ এই বিশ্ব জগতের মালিক একমাত্র আল্লাহ,তিনি যাবতিয় শৃষ্টির প্রতিপালক,তাহার কোন শরীক নাই তিনি লা-শরীক এবং সারা জাহানের সৃষ্টি কর্তা। আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে সবই তার অধিনে।তাহার হুকুমের দান।তিনিই আকাশ,পাতাল,নদ,নদি, সাগর,মহাসাগর,পাহার পর্বত,বেহেশতো,দোযখ, ইহকাল,পরকালের একমাত্র মালিক রাজা ধীরাজা।দুনিয়ার বুকে এমন কাহার সাধ্য আছে যে সে কোন স্থানকে নিজের বলিয়া দাবি করিতে পারে..?কাহার শহর..?,কাহার লোক জন..?সবই একমাত্র আল্লাহর।কেউতো সামান্ন নিজের দেহখানেরই দাবি করতে পারে না।এই দুনিয়ায় সকলেই তো কয়েকদিনের অতিথি হইয়া আসিয়াছি।এইখানে কাহারও থাকিবার সাধ্য নাই অনন্তকাল।সময় হইলেই সকলকেই এই দুনিয়া ছেরে আপনজন ছেরে চলে যেতে হবে। এইরূপ পত্র লিখিয়া হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  তাহার একজন শিষ্যের মারফতে পাঠাইয়া দিলেন সাধুর নিকট।
হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)  পত্রখানা পাইয়া সাধু ব্যাক্তি ধীরে ধীরে পড়িতে লাগিলেন।পত্রের শেষ লাইন পরিয়া ফেলা মাত্র তাহার নিকট মালাকুল মউত ফেরেশতা আজ্রাঈল (আ:) উপস্থিত হইলেন।মুহুর্তের মধ্যেই আল্লাহর হুকুমে রূহ কবজ করিয়া চলিয়া গেলেন।সাধু ব্যাক্তির প্রানহিন দেহ পরিয়া রইল।কোথায় গেল তার হিংসা। তাই হিংসা করা মহাপাপ।

পরবর্তী অর্ধায়
ভষ্ম হইতে আল্লাহ প্রেমিক ফকিরের পুনরুণ্থান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ