আল-কুরআনের আলো

Md: Robiul islam আমি মোঃ রবিউল ইসলাম আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে স্বাগতম, আমি নিয়মিত পোষ্ট করে থাকি, আর নিয়মিত পোষ্ট-এর আপডেট পেতে এখনই আল-কুরআনের আলো �� ওয়েব পেজটি সাবস্ক্রাইব করুন ধন্যবাদ।

29 তম অর্ধায় দস্যু বিনাশ এবং জৈনক সওদাগরের প্রাণরক্ষা করিলে হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)


লেখক: মো: রবিউল ইসলাম

হযরত আবু মুহাম্মদ আবদুল হক কুদ্দুস (রহ:) এর বিখ্যাত কিতাব মদিনাতুল আউলিয়া হইতে জানাযায়।
হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) একদা স্বীয় খড়ম নিক্ষেপ করিয়া দস্যুকে সংহার  করিয়াছিলেন।ইহাতে একজন সওদাগরের ধন প্রান রক্ষা হইয়াছিল।

সফর মাসের একদিন সন্ধ্যার পূর্বক্ষণে হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) মাদরাসায়ে কাদরিয়া ছাত্রদিগকে পড়াইতেছিলেন।কিছুক্ষন পরাইয়া হঠাৎ তিনি ছাত্রদের পরিত্যাগ পূর্বক অজু করিয়া গভীরভাবে ইবাদতে ডুবিয়া গেলেন।ইবাদত করা অবস্থায় তিনি জোর গলায় ইল্লাল্লাহ,বলিয়া চিৎকার করিয়া উঠিলেন।এবং নিকটেই থাকা পাদুকা খড়ম খানা তুলিয়া ক্রোধভরে একদিকে ছুরিয়া মারিলেন।খড়ম খানা কোথাও কাছাকাছি পড়িতে দেখা গেলনা।কোথায় যে চলিয়া গেল কিছুই বোঝা গেল না।

হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)এর চেহারায় তখন অগ্নিরূপ।ভয়ানক ক্রোধ যেন খাটিয়া পরিতেছিল।সমস্ত সরিল থর থর করিয়া কাপিতেছিল।তাহার এই রুদ্র মূর্তির সামনে কোন বীর পুরুষ যায় তার কোন সাধ্য নাই।উপস্থিত ছাত্ররা তাহার উত্তপ্ত মেজাজ দেখিয়া ভয়ে জড়সড় হইয়া গেল।কেহই কোন প্রকার টু শব্দটা করিবার সাহস পাইল না।সকলেই নিজ নিজ পড়া সমাপ্ত করিয়া চলিয়া গেল।
একমাস পার হইয়া গেল হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) তাহার পায়ের খড়ম সম্পর্কে কাউকে কিছুই বল্লনা।তাহার নিকট এ বিষয়ে কেহ কিছু জিগ্যেস করতে সাহস পায়না।ওস্তাদের অনেক বিশ্ময়কর ঘটনা ছাত্ররা জানতো।তাই এ বিষয়টিকেও সেই রকম মনে করিয়াছিল।হুজুর যদি কখনো ইচ্ছা করিয়া খড়ম নিক্ষেপ এর কারন বর্ননা করেন তখনই তাহারা জানিতে পারিবে।

একদিন বাগদাদ নগরিতে একদল বনিক আসিয়া পৌছিল। বনিকদলের মধ্যে একজন যুবক সওদাগর কয়েকটি মোহর সর্নমূদ্রা,মূল্যবান কতক থান রেসমি কপড়,কিছু মূল্যবান পাথর এবং সুস্বাদু কাই ফল ঝুড়িতে  করিয়া জনৈক চাকরের মাথায় চাপাইয়া হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) এর দরবারে হাজির হলো।বিদেশী সওদাগর হুজুরের সাথে সাক্ষাতের প্রর্থনা করিলে হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) স্বীয় হুজরা খানা হতে বের হয়ে মেহমানদের বসিবার ঘরে আসিলেন।সওদাগর ঝুরি নামাইয়া হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)এর পদপ্রান্তে রাখিয়া কদমবুসী গ্রহন করিল।সওদাগর এক এক করিয়া ঝুরি হইতে উপহার সামগ্রী তুলিয়া তক্তপোষের উপর রাখিল।আর সামগ্রির মধ্যে সুন্দর কাপরে মোরানো একজোড়া খড়মও ছিল।

হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) খড়ম জোড়া লক্ষ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন হে বিদেশী সওদাগর তুমি আমার খড়ম জোড়া কোথায় পাইলে...?
যুবক সওদাগর বলিল হুজুর সে তো অনেক কথা।আপনি অনুমতি দিলে আমি বিস্তারিত বলতে পারি।হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:) তাহাকে বিস্তারিত বলার অনুমতি দিলেন।

সওদাগর বলিতে লাগিল: আমি কয়েকজন সঙ্গী সাথী লইয়া অনেক দুর দেশে বানিজ্যে গিয়াছিলাম।বানিজ্যে ভাল লাভবান হইলাম। দেশে ফিরিবার সময় অনেক দ্রব্য সামগ্রি ক্রয় করিলাম।উহা সদেশে আনিয়া বিক্রি করিবার জন্য।আমরা অনেক পথ অতিক্রম করিয়া তাবু ফেলাইলাম বিশ্রামের জন্য।ঐদিন ছিল সফর মাসের তিন তারিখ।আমরা বুঝিতে পারিনাই যে উক্ত এলাকাটি বিশেষ ভাল নহে।রাত্রী গভির  হইয়া আসিলে হঠাৎ একদল দস্যু আমাদের উপর হামলা দিল।তাহারা তরবারি চালাইয়া আমার সঙ্গী - সাথীদের জখম করিল।তারপর আমার সমস্ত দ্রব্য সামগ্রী লুন্ঠনে প্রবৃত্ত হইল।আমি আর বাধা দিতে পারিলাম না।সঙ্গী - সাথীরাও যখম হয়ে চিৎকার করিতে লাগিল।আমি তাহাদের সেবা করিব না প্রান রক্ষা করে পালাব কিছুই স্থীর করিতে পারিতেছিলাম না।দস্যুদের অত্যাচার দেখিয়া আমার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেল। আমি সম্পদের মায়া ভুলিয়া গেলাম।দস্যুরা তখন সব মালামাল সরাইয়া ফেলিতে উদ্যত হইয়াছে।আমি সর্বনাশা বিপদে অস্থির হইয়া পরিলেও আল্লাহর উপর ভরসা হারাই নাই।
এমন সময় বিকট একটা শব্দ পাইয়া আমরা ভয়ে আরো ভিত হইয়া পরিলাম। মাঠ ঘাট কাপিয়া উঠিল।ভূমিকম্পের ন্যায় মাটি কপিয়া উঠিল।কিছুই বুঝিয়া উঠতে পারলামনা।ঐ স্থান একেবারে স্তব্ধ হইয়া গেল।নিরব নিথর চর্তুদিক।দস্যুরা এইফাকে মালামাল লইয়া কোন ফাকে সরিয়া পরেছে তাহা দেখিতেও পাইলাম না।আমরা একেবারে হিম সিতল হইয়া দারাইয়া রহিলাম।কিছুক্ষন পর বনের মধ্যে হৈ চৈ শোরগোল পরিয়া গেল।দৌরাদরি আর চিৎকার আমাদের কর্নে প্রবেশ করিল। আমি সেইদিকে মনোযোগ দিতেই সুনিতে পাইলাম কয়েকটি কন্ঠ একত্রে চিৎকার করিয়া বলিতেছে সওদাগর ভাই ওহে সওদাগর ভাই আমাদের বাচাও।সওদাগর তোমার ধন দৌলত লইয়া যাও।আমাদের বাচাও,আমাদের পাপের সাস্তী হইয়াছে।কি এক খড়মের আঘাতে  সরদার মারা পরিয়াছে।আমরাও আর খরমের আঘাত সয্য করতে পারিতেছি না।জলদি আসিয়া আমাদের রক্ষা কর।
এইরুপ আর্তনাদ শুনিয়া আমার অনেকটা সাহস ফিরিয়া আসিল।আমি সাহস করিয়া বনের নিকটে হাজির হইলাম। আমি দেখিলাম জমিনে সরদারের মৃত দেহ পরিয়া আছে।আর তাহার সঙ্গীরা এদিক ওদিক ছুটিতেছে আর একজোরা খড়ম শূন্যে থাকিয়া তাহাদের বেদম পিটাইতেছে।আমি উপস্থীত হওয়ার পর খড়ম জোড়া সান্ত হইয়া জমিনে নামিয়া আসিল।

আমি আপনার কথা শুনিয়াছি।আপনার ক্ষরমের কথাও বাগদাদে আসিয়া জানিতে পারিয়াছিলাম।
আমার মনে হলো খড়ম জোড়া আপনার,আর আপনার কারামতিতে আমরা বাচিয়া গিয়াছি।তখনি আমি খড়ম জোড়া তুলিয়া লইলাম।

অতঃপর দস্যুরা আমার লুন্ঠিত মালামাল ফেরত দিল।কয়েকজন দস্যু আল্লাহর ভয়ে ভীত হইয়া আপনার নিকট আসিয়াছে তওবা করিয়া সৎপথে চলিবার জন্য।হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানি (র:)তাহাদের কে মুরীদ করিয়া ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করিলেন এবং সওদাগরের উপহারের মধ্যে খড়ম জোড়া রেখে বাকি সব উপহার দস্যুদেরকে দান করলেন।যেন তারা সাধারন জীবন যাপন করতে পারে।

পরবর্তী অর্ধায়
হিংসার পরিনাম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ